দৌলতদিয়া ফাঁকা ঘাটে ভোগান্তির অবসান, রাজস্ব হ্রাসের শঙ্কা
বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু চালুর সাথে সাথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগের অন্যতম রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ কমে আসায় পারাপারে ভোগান্তি কমেছে, সেই সঙ্গে কমছে রাজস্ব আয়ও।
এখন প্রায় ফাঁকা দৌলতদিয়া ঘাট, ফলে কমতে শুরু করেছে রাজস্ব আয়ও।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই প্রতিবেদক রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে এই চিত্র দেখতে পান। আগে ফেরির জন্য দীর্ঘ গাড়ির সারি থাকলেও এখন ঘাটে আসা প্রায় প্রতিটি ফেরিকেই উল্টো দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যানবাহনের অপেক্ষায়। এদিন অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট বেশি সময় অপেক্ষা করে যানবাহন নিয়ে পারাপার হতে দেখা যায় ফেরিগুলোকে।
এদিকে,গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পার হয়েছে ঢাকামুখী ২ হাজার ৭১০টি যানবাহন। এর মধ্যে যাত্রীবাহী পরিবহন ৪৫০টি, পণ্যবাহী ট্রাক ১ হাজার ১২৯টি, ছোট গাড়ি ১ হাজার ৬৯টি ও মোটরসাইকেল ৫৯টি বলে জানিয়েছে ঘাটের দায়িত্বশীল সূত্র।
তবে এই সংখ্যা বেশ কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতু চালুর আগে অন্যান্য দিন যেখানে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার যানবাহন নদী পার হতো এখন সেখানে প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন কমে গেছে।
তবে ভোগান্তি ও অপেক্ষা ছাড়াই ঘাটে এসেই মুহূর্তের মধ্যে ফেরি পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহারকারী যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হওয়ায় তারা বেশ খুশি।
যাত্রী ফরিদুর রহমান ও রাসেল জানান, আগে ফেরিতে ওঠার জন্য সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতেন। আর এখন গাড়ির জন্য ফেরি অপেক্ষায় আছে, পুরো উল্টো চিত্র।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক ইমরান আলী বলেন, দৌলতদিয়ায় এখন তাদের সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে না। এতে করে সময় মতো মালামাল পরিবহন করতে পারছেন। পচনশীল পণ্য নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। পার্টির কথাও শুনতে হচ্ছে না।
এ রুটে নিয়মিত চলাচলকারী গোল্ডেন লাইনের চালক দুলাল শেখ বলেন, গত কয়েকদিন আগেও দৌলতদিয়ার সড়কে যানবাহনের লম্বা সিরিয়াল ছিল। কিন্তু আজ দু'দিন কোনো সিরিয়াল নেই। এতে তাদের সময় কম লাগছে।
আরেক চালক টিপু সুলতান বলেন, গাড়ি নিয়ে সরাসরি ফেরিঘাটে চলে এসেছেন। আগে ফেরি পেতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। ফলে সিডিউল অনুযায়ী ট্রিপ ধরতে পারতেন না। এখন সে সমস্যা হবে না। তাছাড়া সরাসরি ফেরিতে উঠতে পেরে যাত্রীরাও খুশি বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে, যানবাহন ও যাত্রী সংখ্যা কমায় কিছুটা হতাশায় ভুগছেন ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও হকাররা। তাদের ভাষ্য, যানবাহন ও যাত্রী কমে যাওয়ার বেশ প্রভাব পড়বে তাদের ব্যবসায়।
দৌলতদিয়া ঘাটের হকার শিমুল, ইয়াকুব, ইমান শেখ ও রফিকসহ কয়েকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। আগে সিরিয়ালে দাঁড়ানো গাড়িতে তাদের বেচা-বিক্রি ভালো হতো। কিন্তু এখন তেমন হচ্ছে না। কারণ গাড়ির তুলনায় হকারের সংখ্যা বেশি। তবে জনদুর্ভোগ কমায় তারাও খুশি এবং ক্রমে তাদের বেচা-বিক্রি বাড়বে বলেও তারা আশাবাদী।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে ভোগান্তি কমেছে দৌলতদিয়ায়। সিরিয়ালে নেই কোনো যানবাহন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭১০টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে ছোট-বড় ২১টি ফেরি চলাচল করছে। সিরিয়াল না থাকার ফলে নেই ভোগান্তি।
অপরদিকে, গাড়ি ও যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঘাটের রাজস্ব বেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। রোববার ও সোমবার ঘাট ঘুরে সে অবস্থা দেখা যায়। তবে এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন দায়িত্বশীলরা। তারা বরং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন।
এ রুটে যানবাহন কমে যাওয়া ও রাজস্ব হ্রাসের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে যানবাহন ঠিকই পারাপার হচ্ছে। কিছুদিন না গেলে বোঝা যাবে না এ রুটে কেমন হবে গাড়ির সংখ্যা।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া থেকে ২ হাজার ৬৫৬টি যানবাহন এবং দৌলতদিয়া থেকে ২ হাজার ৭১০টি যানবাহন ফেরিতে নদী পার হয়েছে। এরআগে ২৫ জুন পাটুরিয়া থেকে ৩ হাজার ২৭৭টি এবং দৌলতদিয়া থেকে ৩ হাজার ৩৪৩টি যানবাহন ফেরিতে পার হয়েছে।