পাকিস্তানে কর ফাঁকি দিলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সম্পত্তি বেচা-কেনা করা যাবে না
কর আইন সংশোধনের লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় পরিষদে একটি নতুন আইনের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে দেশটির কর কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদানের পাশাপাশি কর পরিশোধে অযোগ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না। এছাড়া, তারা ৮০০ সিসি-র বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন কিনতে পারবেন না, সম্পত্তি বেচা-কেনা করতে পারবেন না এবং নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালালে সেটি সিলগালা করে দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব জাতীয় পরিষদে এই বিলটি পেশ করেন। এতে ১৯৯০ সালের সেলস ট্যাক্স আইন, ২০০১ সালের আইসিটি (সার্ভিস কর) অধ্যাদেশ এবং আয়কর আইনসহ বেশ কয়েকটি কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন এই আইনে 'ফাইলার, নন-ফাইলার এবং লেট ফাইলার' শব্দগুলোর পরিবর্তে 'যোগ্য ব্যক্তি' ও 'অযোগ্য ব্যক্তি' শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন কর আইনটি কর সংগ্রহ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং কর ফাঁকি রোধের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত হলেও, কর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ছোট ব্যবসা ও নারীসহ ব্যক্তিগত করদাতাদের ওপর নতুন আইনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, "যোগ্য ব্যক্তি" হলেন এমন ব্যক্তি, যিনি সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং তার সম্পদ বিবরণীতে (ব্যক্তির ক্ষেত্রে) বা আর্থিক বিবরণীতে (প্রতিষ্ঠান বা সমিতির ক্ষেত্রে) যথেষ্ট সম্পদ ঘোষণা করেছেন।
এই আইনে "যোগ্য ব্যক্তি"-এর পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রী, ছেলে (২৫ বছরের নিচে বয়স), অবিবাহিত বা বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে এবং প্রতিবন্ধী সন্তান।
আর্থিক লেনদেন
নতুন কর আইনে "অযোগ্য ব্যক্তি"-দের আর্থিক লেনদেনের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা এক্সাইজ ও ট্যাক্সেশন বিভাগের যানবাহন নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কোনো অযোগ্য ব্যক্তির গাড়ি বুকিং, ক্রয় বা নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণ বা প্রক্রিয়াকরণ করবে না।
এছাড়া, অযোগ্য ব্যক্তির স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউ-এর (এফবিআর) নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে নিবন্ধন, রেকর্ডিং, সত্যায়ন বা স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অযোগ্য ব্যক্তিরা সাধারণ বা সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খুলতে বা পরিচালনা করতে পারবেন না, তবে "আসান অ্যাকাউন্ট" এর ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে। তাছাড়া, নগদ উত্তোলনের জন্য এফবিআর একটি সীমা নির্ধারণ করবে, যা সময়ে সময়ে জানানো হবে।
ব্যাংকগুলোকে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা ঘোষিত সম্পদ ও টার্নওভারের বাইরে আর্থিক কার্যক্রমে জড়িত।
জরিমানা ও শাস্তি
নতুন কর আইনে কর কমিশনারদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিল করা, সম্পদ জব্দ করা এবং বিক্রয় কর নিবন্ধনে ব্যর্থ হওয়া ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসা দুই দিনের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করলে এসব বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। কর কমিশনারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এফবিআর-এর ইনল্যান্ড রেভিনিউ বিভাগের প্রধান কমিশনারের কাছে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।
আইনটি এমন পণ্য বিক্রির জন্য জরিমানার প্রস্তাব করেছে, যেগুলোতে সঠিক কর স্ট্যাম্প, স্টিকার বা বারকোড নেই। ইনপুট ট্যাক্স সমন্বয় নিয়ে কোনো ধরনের অপব্যবহার রোধে এফবিআর একটি স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহার করবে, যা সন্দেহজনক দাবিগুলো চিহ্নিত করবে।
ছাড়
নতুন কর আইনে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে ৮০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি, রিকশা, মোটর রিকশা এবং ট্রাক্টর কেনার লেনদেন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রাক ও বাস কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সম্পর্কে এফবিআর নির্দেশনা দেবে।
ঋণ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ক্ষেত্রে, যদি সেগুলো কর রিটার্নে সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয়, তবে লেনদেনে কোনো বাধা থাকবে না। নন-রেসিডেন্ট এবং পাবলিক কোম্পানিগুলো এই বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে।
অঘোষিত সম্পদ, যা রেমিটেন্স বা উত্তরাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হলে এফবিআর তা লুকানোর অভিযোগ তুলবে না।
এছাড়া, কর কর্তৃপক্ষকে নিরীক্ষা, তদন্ত, মামলা বা মূল্যায়নের জন্য চুক্তিভিত্তিক অডিটর ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।