‘মিসেস শ্রীলঙ্কা’ সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক, আসরেই খুলে নেওয়া হলো মুকুট
'মিসেস শ্রীলঙ্কা' সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঢেউ। রোববার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সাবেক এক সুন্দরী বিজয়ী নারীর মাথা থেকে সেরা সুন্দরীর মুকুট খুলে নেন। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, বিজয়ী নারী একজন ডিভোর্সি, তাই তিনি এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা রাখেন না।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার দিনে দর্শকদের হাততালি ও উল্লাসের মধ্য দিয়েই বিজয়ী হিসেবে পুস্পিকা ডি সিলভার নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে, আয়োজকরা তার মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই ২০১৯ সালের সাবেক বিজয়ী ও ২০২০ সালে 'মিসেস ওয়ার্ল্ড' বিজয়ী ক্যারোলিন জুরি মঞ্চে উপস্থিত হন। তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আমার একটা ছোট অনুরোধ আছে। যেহেতু এই প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে মিসেস ওয়ার্ল্ড হতে গেলে আপনাকে বিবাহিতা হতে হবে, ডিভোর্সি নয়; তাই আমি দাবি জানাচ্ছি, এই মুকুট আসলে প্রথম রানার আপের মাথায়ই যাওয়া উচিত।'
এরপরই তিনি স্তম্ভিত বনে যাওয়া ডি সিলভার দিকে ঘুরেন এবং জোর করে তার মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে প্রথম রানার আপের মাথায় পরিয়ে দেন। অপ্রত্যাশিত এ বিজয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন প্রথম রানার আপ এবং বিচারকদের ধন্যবাদ দিতে থাকেন। যদিও ততক্ষণে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান ডি সিলভা।
১৯৮৪ সাল থেকে বিবাহিত নারীদের জন্য 'মিসেস ওয়ার্ল্ড' নামে আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতা সিরিজ শুরু হয়। প্রতিটি দেশ থেকে সেরা বিজয়ীরা পরবর্তীকালে একে অপরের মুখোমুখি হন চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে, এখানে নাম লেখানোর সময় পর্যন্ত প্রতিযোগিদের অবশ্যই বিবাহিতা হতে হবে।
তবে এ ঘটনার পর আয়োজকরা ডি সিলভাকেই আনুষ্ঠানিক বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। তাদের দাবি, 'বিবাহিত' হবার শর্ত পূরণ করেই প্রতিযোগিরা এখানে সুযোগ পেয়েছেন।
এদিকে, সোমবার নিজের ফেসবুক পোস্টে ডি সিলভা লিখেছেন, 'একান্ত ব্যক্তিগত কারণে' তিনি ও তার স্বামী আপাতত আলাদা থাকছেন, তবে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়নি। তিনি আরও জানান, যদি অযোগ্য হতেন, তাহলে শুরুতেই তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হতো।
নিজের বিবৃতিতে ডি সিলভা এই ঘটনায় তাকে অপমান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি জুরির কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সত্যিকারের রাণীরা অন্যের মাথার মুকুট ছিনিয়ে নেন না। তবে মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পোস্টে আরেকটি বিবৃতিতে ডি সিলভা জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।
'মিসেস ওয়ার্ল্ড' কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি পুনরায় খতিয়ে দেখবে।
'মিসেস শ্রীলঙ্কা' প্রতিযোগিতার আয়োজকরা জুরিকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিবেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমাদের বর্তমান বিজয়ী, মিসেস ওয়ার্ল্ড ২০২০ ক্যারোলিন জুরি সেদিন মঞ্চে যে আচরণ করেছেন, তার জন্যে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত। মিসেস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপস করবে না। যদি মিসেস শ্রীলঙ্কা আমাদের প্রতিযোগিতার সব শর্ত পূরণ করেন এবং বৈধভাবে বিবাহিত হন, তাহলে তিনি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।'
বিভিন্ন দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম প্রযোজ্য হয়ে থাকে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে বিবাহিত বা গর্ভবতী বা কখনো সন্তানের মা হয়েছেন, এমন নারীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেয়া হয় না। মিস ওয়ার্ল্ড আমেরিকার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম রয়েছে।
সমালোচনার মুখে এইসব নিয়ম কখনো কখনো আয়োজকদের বিভিন্ন নিয়ম বদলাতেও হয়েছে।
নিজেদের বিয়ের ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন, এমন প্রমাণিত হওয়ায় সুন্দরীর মুকুট কেড়ে নেওয়ার ঘটনা আগেও বহুবার ঘটেছে। এই যেমন, মিস ডমিনিকান রিপাবলিক ২০১২ বিজয়ী কার্লিনা দুরানের মুকুট কেড়ে নেওয়া হয় পরে। কারণ আয়োজকরা পরে জানতে পারেন, তিনি নিজের বিয়ের কথা লুকিয়েছেন এবং নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করেছিলেন।
২০১৮ সালে মিস ইউক্রেন বিজয়ী ভেরোনিকা দিদুসেনকো একজন ডিভোর্সি মা, তা উন্মোচিত হওয়ায় তার খেতাব কেড়ে নেওয়া হয় বিজয়ী হবার কয়েকদিন পরেই।
দিদুসেনকো গতবছর নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানান, ইংল্যান্ডের মানবাধিকার কমিশন এই যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিস ওয়ার্ল্ড আয়োজকদের নামে মামলা না করার কারণ, তাতে তাদের কৌশলগত সুবিধা হয় না।
- সূত্র: সিএনএন