বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ভারতের মেয়েরা কেন বারবার শিরোপা জেতে?
যুক্তরাষ্ট্র আয়োজন করে মিস ইউনিভার্স। মিস ওয়ার্ল্ড আয়োজন করে ব্রিটেন। প্রথমটি শুরু হয়েছে ১৯৫২ সালে আর দ্বিতীয়টি ১৯৫১ সালে। ১৯৬০ সাল থেকে জাপান আয়োজন করতে শুরু করে মিস ইন্টারন্যাশনাল আর ফিলিপাইন ২০০১ সালে শুরু করে মিস আর্থ। প্রায়ই বিশ্লেষকরা খেতাব জেতার হার ধরে নানা রাজনৈতিক হিসাব মেলানোর চেষ্টা করেন। সে আলোচনায় একটি দেশের নাম ঘুরেফিরে আসে- ভারত। তারপর জ্যামাইকা। ভারত ছয় বার মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে, চারবার জিতেছে জ্যামাইকা। এ দুটি দেশই ব্রিটিশ কলোনি ছিল। অন্যদিকে মিস ইউনিভার্স আটবার জিতেছে আয়োজক আমেরিকা। তারপর ভেনিজুয়েলার পরেই আসে পুয়ের্তো রিকোর নাম। এর মধ্যে ভেনিজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ এবং পুয়ের্তো রিকো যুক্তরাষ্ট্রের আনইনকরপোরেটেড টেরিটরি ( দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কিছু অনুশাসন বলবৎ আছে)। যাহোক ওই চারটি প্রতিযোগিতার মোটমাট হিসাবে ২৩টি পুরস্কার জিতেছে ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন জিতেছে ১৫টি, যুক্তরাষ্ট্র ১৫টি, পুয়ের্তো রিকো ১০টি আর ভারত ৯টি। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য জিতেছে ৭টি করে। এর মধ্যে ফিলিপিনো নারীদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা নির্মল, সরলমতি, ভোলাভালা এবং নম্র স্বভাবের। আবার ভারতীয় নারীদের বিষয়ে বলা হচ্ছে, তারা শুধু বাইরে থেকে নয় ভেতর থেকেও সুন্দর। তাদের অনেকে নিরামিষভোজী তাই তাদের ত্বক সুন্দর হয়, চেহারা হয় ঝলমলে। তাদের স্বর ও স্বভাব হয় কোমল। মনও নরম। তাদের হাসি সুন্দর, তারা তাদের পরিবারকে ভালোবাসে। অনেকে আবার তাদের চোখের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন (ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চোখ যেমন), কেউ কেউ বলছেন সুন্দর ঠোঁটের কথা। ঘন কালো চুলেরও গুরুত্ব আছে অনেকের কাছে। অনেকে আরেকটু গভীরভাবে ব্যাপারটি দেখার চেষ্টা করেছেন, ভারতীয়দের মধ্যে ককেশীয় এবং দ্রাবিড়ীয় উভয় নরকুলের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সেহেতু তাদের গাত্রবর্ণ যেমন উজ্জ্বল হয়, আবার মুখ হয় গোলাকার। এমনটা পৃথিবীতে খুব বেশি হয় না।
২০০০ সালে ভারত যেমন মিস ওয়ার্ল্ড এবং মিস ইউনিভার্স দুটিই জিতেছিল। ভারতের জিনাত আমান ও তারা আনে ফনসেকা মিস এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল জিতেছেন যথাক্রমে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে। সবমিলিয়ে ভারত পুরস্কারটি জিতেছে ৩ বার। এছাড়া মিস এশিয়া প্যাসিফিক ওয়ার্ল্ডও জিতেছে ৩ বার। মিস সুপ্রান্যাশনাল ২ বার, মিস ট্যুরিজম ২ বার। আর নিকোলে এসটেলা ফারিয়া মিস আর্থ জিতেছেন ২০১০ সালে। উল্লেখ্য ভারতের সমান ছয়বার মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে কেবল ভেনিজুয়েলা। যেখানে আমেরিকা মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছে তিনবার। ওদিকে ভারত বেস্ট থ্রিতে পৌঁছেছে অনেকবারই। আরো বড় কথা, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে বলা হয়, এযাবৎকালের সবচেয়ে সফল মিস ওয়ার্ল্ড।
মিস ইউনিভার্সে ভারত বেশিই সফল। এ বছর, এই একুশ সালেও মিস ইউনিভার্স জিতল মিস ইন্ডিয়া।
ভারতের বিশ্বসুন্দরীদের তৈরি করে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বিশ্বদরবারে হাজিরের কাজটি করে মূলত ফেমিনা। ১৯৬৪ সালে শুরুর পর থেকে ফেমিনাই যোগাযোগ গড়ে দিচ্ছে বিশ্ব পরিসরে। সত্তর ছুঁই ছুঁই ফেমিনার তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা প্রতিযোগীরা এর মধ্যেই ঝুলিতে পুরেছে চারবার মিস ইউনিভার্সের তকমা আর মিস ওয়ার্ল্ডের তকমা ছয়বার। ভারত থেকে যাওয়া প্রতিযোগীদের মিস ইন্ডিয়া হওয়ার মধ্য দিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার শুরু। আর মিস ইন্ডিয়া মানেই ফেমিনার কোনো প্রতিযোগী। ফেমিনার বাইরে থেকেও যে মিস ইন্ডিয়া হননি কেউ এমন নয়। হয়েছেন অনেকেই। তবে তাদের সুন্দরী প্রতিযোগীতায় আনা প্রতিষ্ঠানের কমই ফেমিনার মতো প্রভাব রাখে।
ভারতের প্রথম মিস ইন্ডিয়া
১৯৪৭ সালে প্রথমবার মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন কলকাতার এস্থার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম (১৯১৬-২০০৬)। সেবার প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছিল লোকাল প্রেস। এস্থারের মঞ্চ নাম প্রমীলা। তিনি ছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী। ভারতের প্রথম নারী চলচ্চিত্রকারও তিনি। তার জন্ম কলকাতার এক বাগদাদি ইহুদি পরিবারে। তার বাবা রুবেন আব্রাহাম কলকাতার একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। মা ছিলেন করাচীর, নাম মাতিলদা আইজাক। প্রমীলার ছিল ছয় ভাই বোন। অবশ্য তার বাবার আগের ঘরে আরো তিন ভাইবোন ছিল। এস্থারের নিজেরও বড় সংসার ছিল। প্রথম ঘরে একটি সন্তান আর পরে সহকর্মী কুমার নামে খ্যাত সৈয়দ হাসান আলী জায়েদীর ঘরে চার সন্তান। ১৯৬৩ সালে জায়েদী চলে যান পাকিস্তান কিন্তু এস্থার থেকে যান ভারতেই। প্রমীলার মেয়ে জাহানও ১৯৬৭ সালে মিস ইন্ডিয়া জিতে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন অব দ্য প্যাসিফিক কোয়েস্ট নামের প্রতিযোগিতায়। ভারতের ইতিহাসে তারাই একমাত্র মা-মেয়ে জুটি যারা দুজনই মিস ইন্ডিয়া খেতাব জিতেছিলেন।
উল্লেখ্য প্রমীলা যখন মিস ইন্ডিয়া খেতাব জেতেন তখন তার বয়স ছিল ৩১ (তখন অবশ্য সেভাবে বয়স নিয়ে কোনো নিয়মকানুনই ছিল না, এখন যেমন ২৮ বছরের বেশি কেউ এ প্রতিযোগিতায় অংশই নিতে পারে না)। প্রমীলার বিনোদন জগতে আগমন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর সময় প্রজেক্টরের মাস্টার রিল পরিবর্তন করতে হত, তখন ১৫ মিনিটের বিরতিতে প্রমীলার নাচ দেখানো হতো। প্রমীলা মোট ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তখনকার (পঞ্চাশের দশক) বোম্বের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগ আনেন। পরে অবশ্য প্রমাণ হয় প্রমীলা চলচ্চিত্রের প্রচার কাজেই পাকিস্তান যেতেন। প্রমীলা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছিলেন, তিনি ভালো শিক্ষকও ছিলেন। পোশাক আর গহনাও নকশা করতেন।
প্রমীলার পর বায়ান্ন সালে মিস ইন্ডিয়া হয়েছেন ইন্দ্রানি রহমান। তখন তিনি ছিলেন এক সন্তানের মা। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছিলেন। ইন্দ্রানী নাচ দেখিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন জন এফ কেনেডি আর জওহরলাল নেহেরুকেও। তার নাচ দেখেছেন মাও জে দং আর ফিদেল কাস্ত্রোও। ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য যেমন ভরতনাট্যম, কুচিপুড়ি, কথাকলি আর ওড়িশিতে তিনি নাম করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে নিউইয়র্ক চলে যান।
ফেমিনা পর্ব
ভারতের নামকরা টাইমস গ্রুপের একটি প্রকাশনা ফেমিনা। ১৯৫৯ সালে প্রথম বাজারে আসে নারীদের জন্য এ সাময়িকী। এটি হিন্দি, বাংলা আর তামিল ভাষায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার বাইরে এ ম্যাগাজিন আরো আয়োজন করে বিউটি অ্যাওয়ার্ডস, ফেমিনা স্টাইলিস্তা, ফেমিনা শোকেস ইত্যাদি। সাময়িকীটির ফেসবুকে ২.৯ মিলিয়ন ফলোয়ার, ইনস্টাগ্রামে আছে সাড়ে পাঁচ লাখ, টুইটারেও তেমন।
ভারতের মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রাথমিক কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়-
১. ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী নারীরা অংশ নিতে পারবে (দেখাতে হয় পাসপোর্ট, জন্মসনদ, স্কুল পাশের সার্টিফিকেট ইত্যাদি)
২. পুরো উন্মুক্ত চিত্র বা অশ্লীল চলচ্চিত্রে অংশ নেওয়ার কোনো ইতিহাস থাকতে পারবে না।
৩. অংশগ্রহণকারীকে ভদ্র ও নম্র ব্যবহার বজায় রাখতে হবে পুরো কার্যক্রম জুড়ে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
৪. প্রতিযোগী কোনো মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে আবদ্ধ থাকতে পারবেন না।
উল্লেখ্য মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতারও এখন আয়োজক ফেমিনা।
উচ্চতা শিথিল
ঘোষণাটি আকাঙ্খিত ছিল। শধু উচ্চতার কড়াকড়ির জন্য অনেকেই মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছিল না। অবশেষে ২০২০ সালে ঘোষণা এলো। তা এমন- এখন ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা সম্পন্ন নারীও আবেদন করতে পারবেন। অনেকেরই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দেবে এটি। আয়োজক সংস্থা ইন্ডিয়া টাইমসই জানাচ্ছে ১৯৬৩ সালে মিস ওয়ার্ল্ড যিনি জিতে নিয়েছিলেন সেই ক্যারল জোয়ান ক্রফর্ডের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় তাকে খাটোই মনে হয়েছিল কিন্তু তিনি সাহসী আর উদ্দীপ্ত ছিলেন। হারিয়েছিলেন ৩৯ জনকে।
অবশ্য এমন উচ্চতা শিথিল প্রক্রিয়া সহজে হয়নি, যেমন যোধপুরের কমলা নেহেরু কলেজের ছাত্ররা সোশ্যাল মিডিয়াতে উচ্চতা কমানোর প্রচারণা চালিয়েছিল। কলেজের ইশা চৌধুরী মিস ইন্ডিয়ার আবেদনপত্র পূরণ করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। কারণ তখন ন্যূনতম উচ্চতা ধরা ছিল ৫.৫ ফুট। অথচ ইশা উচ্চতায় ৫.৪ ফুট। ইশা পরে ব্যাপারটি নিয়ে প্রচারণা শুরু করলে হাজার হাজার নারী তাতে যোগ দেয় এবং নিয়ম পরিবর্তিত হয়।
প্রথম মিস ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়া, ১৯৬৬
রিটা ফারিয়া ছিলেন ডাক্তারিবিদ্যার ছাত্রী। ভারত থেকে প্রথম মিস ওয়ার্ল্ড হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন রিটা। এক বছর খ্যাতির পেছন ঘুরে তিনি পরে লেখাপড়ায় মন দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমার কোনো আফসোস নেই। ভালো পড়াশোনা করেছি। শেষে তিনি ডাবলিনে থিতু হয়েছেন। দুই কন্যা সন্তানের জননী।
অন্যরা কে কোথায়
আনজুম মুমতাজ বার্গ হায়দ্রাবাদের মেয়ে। ১৯৬৮ সালের মিস ইন্ডিয়া। শখের বশেই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছিলেন। নায়ারা মির্জা ১৯৬৭ সালে মিস ইন্ডিয়া হন। মিস ইউনিভার্স থেকে ফিরে আসার পর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অনেক অফার পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি বিয়ে করে সুখী জীবনযাপন করতে চেয়েছেন। মেহের মিস্ত্রী ১৯৬৪ সালের মিস ইন্ডিয়া। তিনি খেতাব জেতার পরও মডেলিং অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি ফ্যাশন বিষয়ক লেখালেখিও করেছেন। তার দুটি বই- ম্যানস্টাইল এবং ফ্যাশন ক্যালাইডোস্কোপ।
পারসিস খামবাট্টা খেতাব জিতেছিলেন ১৯৬৫ সালে। তিনি হলিউডের স্টার ট্রেকে অভিনয় করেছেন। নিউজউইক তাকে ইন্ডিয়ার সোফিয়া লরেন তকমা দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালে মারা গেছেন।
ভারতীয় বিশ্বসুন্দরীদের বুদ্ধিমত্তা
১৯৯৪ সালে মিস ইউনিভার্স হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নারীর গুরুত্ব কি?
উত্তরে বলেছিলেন, নারী হওয়া আশীর্বাদের। নারী মানুষ গড়ে না শুধু, যত্ন নেয়, বড় করে।
১৯৯২ সালে মিস ইউনিভার্স (দ্বিতীয় রানার আপ) হয়েছিলেন মধুশ্রী সাপ্রে। শেষ পর্বের সকল প্রতিযোগীকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশের প্রধান করা হলে প্রথমেই কি করবেন?
মধু উত্তরে বলেছিলেন, আমি বড় বড় খেলার মাঠ তৈরি করব কারণ আমাদের দেশে শিশুদের খেলার মাঠ বেশি নেই।
১৯৯৪ সালে মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া রাই। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। একজন মিস ওয়ার্ল্ডের কী গুণ থাকা আবশ্যক মনে করেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, সমবেদনা বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা সুবিধাবঞ্চিত।
যুক্তামুখী মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। বিচারকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, আমার আদর্শ হলেন অড্রে হেপবার্ন। তার সমব্যথী মন আছে। তিনি ভেতর থেকেই সুন্দর। আমি থাই ফুড পছন্দ করি আর ফ্রান্সে আবাস গড়তে চাই।
লারা দত্ত ২০০০ সালে মিস ইউনিভার্স হয়েছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অনেকে বলছে এ প্রতিযোগিতা নারীর জন্য অবমাননাকর, আপনি কী বলেন?
লারা বলেন, যারা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য আমি এটাকে দারুণ প্লাটফর্ম মনে করি। নারীর স্বর উঁচু করার ক্ষেত্র এটা। প্রিয়াংকা চোপড়া মিস ওয়ার্ল্ড জিতেছেন ২০০০ সালেই। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জিতলে তুমি কী কী করবে? তিনি বলেছিলেন, এ সম্মান ও শক্তি ব্যবহার করব মানুষের চিন্তা ও কর্ম প্রভাবিত করতে। মাদার তেরেসাকে আমি হৃদয় থেকে সম্মান করি। তিনি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সারাজীবন ব্যয় করেছেন। আমিও তেমন করতে চাই।
১৯৭০ সালের মিস ইন্ডিয়া
জিনাত আমানকে হারিয়েছিলেন ১৯৭০ সালে মিস ইন্ডিয়া হওয়া বীনা সাজনানি।
তিনি বলেন, "আমি পোশাকের মডেলিং করতাম। ফেমিনা গ্রুপের সঙ্গে সারা ভারত ঘুরে বেড়িয়েছি। ফ্যাশন শো করেছি। প্রতি শোতে মজুরি পেতাম ১৫০ রুপী। ২০টি শো হওয়ার পরে ছুটি পেতাম বাড়ি যাওয়ার। তখন আমাদের হাতে দেওয়া হতো ৩০০০ রুপী। তখন আমাদের দলে মডেল ছিল মাত্র ১০ জন। আমরা একসঙ্গে যাত্রা করতাম, পথে পথে অনেক মজা হতো।
সত্তর সালের তেমনই কোনো দিন, আমরা ফ্যাশন শোয়ের জন্য রিহার্সাল দিচ্ছি, আমাকে বলা হলো শোতে আমাকে আর দরকার নেই। আমার অনেক কষ্ট লাগলো। ভাবলাম কোনো ভুল করেছি, তাই বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু না। আসলে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে এবং আমাকে এতে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, আমি কিন্তু এর জন্য কোনো যোগাযোগ করিনি। তারপর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহের মিস্ত্রি এবং পারসিস খামবাট্টাকেও (যারা ততদিনে সুপারমডেল, ১৯৬৪ ও ৬৫ সালের মিস ইন্ডিয়া) দেখলাম আমার জন্য আবেদন পত্র পূরণ করে দিচ্ছে। তারপর একদিন সে দিনটি এলো। আমাদেরকে টাইমস অব ইন্ডিয়া অফিস (ফেমিনার মালিক প্রতিষ্ঠান) টেরাসে সুইম স্যুট পরে যেতে বলা হয়েছিল। আমাদের ছবি তোলা হলো। ওইসব দিনে বিচারকরা সুইম স্যুট পরিহিতা প্রতিযোগীদের সরাসরি দেখার সুযোগ পেতেন না বরং আলোকচিত্র দেখে বিচার করতেন। তবে মধ্যবিরতির সময় তারা ওইসব ছবি হাতে নিয়ে স্বল্প আলোয় ব্যাকস্টেজে আসতেন এবং আমাদের চিহ্নিত করতেন। আমরা এতেও বিব্রত হতাম আর হাসাহাসিও করতাম। তবে পুরো আলোতে স্বল্পবসনে মঞ্চে হাঁটার চেয়ে এটা ভালো। পারসিস আর মেহের ওদিকে নানান খবর নিয়ে বেড়াচ্ছিল। পারসিস বলছিল, আমি বিচারকদের খাতায় দেখেছি তোমার নম্বর হলো ৬। এরপর যখন মঞ্চে বিজয়ীর নম্বর ঘোষণা হলো আমরা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। কারণ নম্বরটি ছিল ৬।
মজার কি জানো আমি জিনাত আমানকে (যে পরে বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী হয়েছিল) হারিয়েছিলাম, বিচারকরা কেন জানি তাকে পছন্দ করছিল না। আমি খুশি ছিলাম মিস ইন্ডিয়ার অভিজাত তালিকায় নাম ওঠাতে পেরে। আমার সবসময় আমার বন্ধু ও প্রতিযোগীদের কথা মনে পড়ে। তখন আর অ্যালবাম না খুলে উপায় থাকে না।"