গ্রাহক সুরক্ষা ও ই-কমার্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিজনেস আইডির পরিকল্পনা সরকারের
ই-কমার্সের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা নিতে চলতি বছর থেকেই শতভাগ কমপ্লায়েন্স ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ইউবিআইএন) দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফেসবুক কেন্দ্রিক ই-কমার্সগুলোও এর আওতায় আসবে।
যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইউবিআইএন নম্বর পাবে না, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর মাধ্যমে সেগুলো বন্ধ করে দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, ই-কমার্স বাণিজ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও গ্রাহক প্রতারণা বন্ধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এটি অনুমোদন করেছে। চলতি বছরের মধ্যেই ইউবিআইএন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ই-কমার্স ব্যবসার নামে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বেশকিছু কোম্পানি গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। বিপুল পরিমাণ ডিসকাউন্টের লোভ দেখিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য কিংবা রিফান্ড কোনটাই দিচ্ছে না তারা।
এ ধরণের অনিয়ম ও প্রতারণার রাস্তা বন্ধ করে সম্ভাবনাময় খাতটির প্রতি আস্থা ফেরাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি মনিটরিং টিম কাজ করবে।
ফেসবুককেন্দ্রিক ছোট ছোট ই-কমার্স উদ্যোগ কিংবা বৃহৎ কোম্পানি সবাইকে ইউবিআইএন এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনেই ইউবিআইএন নম্বর সরবরাহ করবে মন্ত্রণালয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এটুআই ও আইসিটি ডিভিশন একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, "আবেদন পাওয়ার পর আমরা তাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজের বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও রিভিউ পর্যালোচনা করে ইউবিআইএন নম্বর দেব। যারা ইউবিআইএন পাবে, তারা তা নিজেদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে আপলোড করে রাখবে, যাতে গ্রাহক বুঝতে পারে যে, কোম্পানিটি নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসা করছে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে না।"
"যারা আবেদন করবে না কিংবা ইউবিআইএন নম্বর পাবে না, বিটিআরসির মাধ্যমে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে"- জানান তিনি।
ইউবিআইএন পাওয়ার পরও কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আইন লঙ্ঘন করছে কি-না, তা নিয়মিত মনিটর করার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য অধিদপ্তরে একটি পৃথক মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।
এই টিমের সদস্যরা নিয়মিতভাবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে দেওয়া বিভিন্ন অফার যাচাই-বাছাই করা, রিভিউ ও কাস্টমারদের কমেন্ট পর্যালোচনা করবে। ইউবিআইএন পাওয়ার পরও কোন কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করে দেবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ১৯ হাজার ৩০৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এরমধ্যে ১৪ হাজার ৩২২টি অভিযোগ ছিল ইভ্যালিসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ সময়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ৭ হাজার ১৩৮টি এবং ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ২ হাজার ৬৪৩টি। এছাড়া ফেসবুক পেইজ ভিত্তিক ই-কমার্সগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে ৪ হাজার ৯৮২টি।