রমজানের আগেই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
রোজা শুরু হতে এখনো এক মাসের বেশি সময় থাকলেও এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। যদিও মাত্রই উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়া পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণই বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা, পাইকারী ও বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এক কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। যদিও কিছু দোকানে ৪৫ টাকাতেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও এই দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও এক মাসের ব্যবধানে ১৫ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫.৭১ শতাংশ বেশি দামে।
কারওয়ান বাজারের দেশি পেঁয়াজের আড়তদার আশরাফুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'স্থানীয় মহাজনরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।'
ঢাকার খুচরা ও পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের কোন প্রকার ঘাটতি নেই বলে জানা গেছে। ভোক্তারা জানান, এবারে ব্যবসায়ীরা হয়তো কৌশল পরিবর্তন করেছে। রোজার সময় অনেক আলোচনা হয় বলে আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসে বেসরকারী চাকরিজীবি আরিফুল ইসলাম বলেন, 'রোজা এখনো অনেক দেরি। অথচ চাল, তেল, পেঁয়াজ, মুরগি, চিনি সবকিছুর দামই চড়া'।
চাল-তেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুরগির চড়া দাম
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম চড়া। এক কেজি মোটা চাল কিনতেই এখন খরচ করতে হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। আরও একটু ভালো মানের চাল কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকা। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা এখনো সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, সাধারণ মানুষ ব্রয়লার মুরগির ওপর নির্ভর করবে তারও সুযোগ কমে আসছে। কারণ প্রতি কেজি মুরগির দাম এখন ১৫৫-১৬০ টাকা। যা মাসখানেক আগেও ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এই অস্থিরতা ঠেকাতে গত মাসের মাঝামাঝিতে সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে দাম অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা লিটার ও খোলা সয়াবিন ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকায়।
এর মধ্যে অবশ্য ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা নতুন করে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে। যা যাচাই বাছাই করছে 'জাতীয় পর্যবেক্ষণ ও মূল্য নির্ধারণ কমিটি'। এই কমিটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে তেলের দাম আরো এক দফা বাড়বে।
এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের এজিএম (একাউন্টস) মো. তাসলিম শাহরিয়ার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকার সেটা যাচাই বাছাই করছে।'
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, 'সরকারকে এখন চেষ্টা করতে হবে পণ্যগুলোর দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো। তাহলে হয়তো বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। না হলে ভোক্তাদের ভোগান্তি কমার সুযোগ দেখছি না।'