রাষ্ট্রায়ত্ত জেমকোর সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি উপেক্ষা করছে সৌদি কোম্পানি
যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (জেমকো) এর সঙ্গে চুক্তি করেছিল সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স (ইডি)। কিন্তু, ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি উপেক্ষা করে আলাদা কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে উৎপাদনে যাচ্ছে সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।
এ অবস্থায় চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করে যৌথ উৎপাদনের উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ। সৌদি কোম্পানিটি এ চুক্তিতে যৌথ উৎপাদনের জন্য সাড়ে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিল।
গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ-সৌদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জেমকো এবং সৌদি প্রতিষ্ঠান ইডির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন।
ওই সভার মূল প্রবন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশন) শিব নাথ রায় বলেন, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং কৌশলগত অংশীদারি চুক্তিতে যৌথ উদ্যোগের কথা থাকলেও বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স আলাদাভাবে সৌদি জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (এসজেমকো) কোম্পানি গঠন করে তাদের উৎপাদন পরিচালনা করছে।
ইতঃপূর্বে, ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (বিএসইসি) আওতাধীন জেমকোর সাথে ইডি কৌশলগত অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ২০১৯ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সই হয়।
এনিয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি'র চেয়ারম্যান শহীদুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিএসইসির প্রতিষ্ঠান জেমকো এবং ইডির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এ অবস্থায় চুক্তিটি নতুন করে পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও জানান, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ এ দেশে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানটির।
'প্রতিশ্রুত এ বিনিয়োগ যাতে করা হয়, সে বিষয়েও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে' যোগ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
চুক্তি পুনঃমূল্যায়নে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশন) প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এতে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি ছাড়াও বিএসইসি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিডা), ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স (ইডি), জেমকো এবং উভয়পক্ষের দুজন আইনজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জেমকো সূত্রে জানা গেছে, সৌদি প্রতিষ্ঠানটি এসজেমকো হিসেবে কোম্পানি গঠন করে যৌথ মূলধনী কোম্পানি রেজিস্টার এ নিবন্ধনও করেছে।
কোম্পানিটি চট্টগ্রামে জেমকোর জমিতে একটি অফিস এবং শেড স্থাপন করেছে। তবে করোনা পস্থিতিতের কারণে এসজেমকো এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এসজেমকোর কাছ থেকে শেডের জায়গা ও বিদ্যুৎ ব্যবহার বাবদ বিএসইসির তিন কোটি ৭৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এসজেমকো কারাখানায়, অয়েল-ইমার্সড টাইপ ট্রান্সফর্মার, ড্রাই-টাইপ ট্রান্সফর্মার, স্পেশাল ট্রান্সফর্মার, বক্স-টাইপ ট্রান্সফর্মার, হাই-ভোল্টেজ সুইচগিয়ার সিরিজ, লো-ভোল্টেজ সুইচগিয়ার সিরিজ, সুইচ সিরিজ পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে সৌদি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স (ইডি) এর সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে জেমকো'র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে জেমকোর জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করে, উৎপাদন ব্যবস্থা আধুনিকায়নই ছিল সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণের পর ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যও ছিল। কিন্তু, ইডি আলাদা কোম্পানি গঠন করায় সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
'বিনিয়োগের মাধ্যমে জেমকোর আধুনিকায়ন না করা হলে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির আরও জরাজীর্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে'- উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের এ-ই (AE) কোম্পানি লিমিটেড এবং রাশিয়ার প্রোমাশ এক্সপোর্টের কারিগরি সহায়তায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ফিডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১২২.৯৬ একর জমিতে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৮০ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে জেমকো। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ বিতরণ সামগ্রী- বিতরণ ও পাওয়ার ট্রান্সফর্মার (৫ এমভিএ পর্যন্ত), ড্রপ আউট ফিউজ, লাইটনিং এ্যারেষ্টর, ডিসকানেক্টর, এইচটি ও এলটি সুইচগিয়ার, বিতরণ প্যানেল ইত্যাদি উৎপাদন করে।