এবার চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি জাহাজ সেবা
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের পর এবার যুক্তরাজ্যেও সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সেবা চালু হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং ও শিপিং কোম্পানি অলসিজ গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানি এই সেবা চালু করছে। আগামী ১৫ মে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রথম জাহাজ 'এমভি অ্যামো' চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারে।
বর্তমানে ইউরোপে একটি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি জাহাজ সেবা চালু রয়েছে। নতুন জাহাজসহ আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি জাহাজ সেবা চালু হবে আগামী মাসে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'এই ধরণের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যুক্তরাজ্যের লিভারপুলসহ কয়েকটি বন্দরে চলাচলের জন্য আমরা তিনটি জাহাজ অনুমোদন দিয়েছি। নতুন রুটে জাহাজ চলাচলের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে আমরা তাৎক্ষণিক অনুমোদন দিচ্ছি। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।'
নতুন এই সেবার আওতায় চট্টগ্রাম থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে জাহাজ সুয়েজ খাল হয়ে প্রথমে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে যাবে। সেখানে রপ্তানি পণ্য খালাস করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বন্দরে পৌঁছাবে জাহাজটি। একইভাবে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরবে।
অলসিজ গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানির জাহাজের স্থানীয় প্রতিনিধি ফিনিক্স শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত বলেন, নতুন সেবায় চট্টগ্রাম থেকে ২৩ দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব। এখন ঘুরে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর হয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে ৩৫-৪০ দিনের মতো সময় লাগছে।
অলসিজ গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানির এই সেবায় তিনটি জাহাজ পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে যুক্ত থাকবে। এরমধ্যে এমভি অ্যামো জাহাজের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৩০ টিইইউস। এমভি বিবিসি ফিনল্যান্ড জাহাজটির ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ টিইইউস। এমভি স্যান আলফনসো জাহাজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮১৯ টিইউএস।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক সংবাদ। সরাসরি রুটে পণ্য পরিবহন বাড়লে শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফ্রেইট চার্জ কমে আসবে। কমবে ব্যবসার খরচ।'
গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবার ইতালিতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজে পণ্য পরিবহনে সেবা চালু হয়। ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান রিফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন এই সেবা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি দুটি জাহাজে এ পর্যন্ত পাঁচবার আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া করেছে, সময় লেগেছে ১৮ থেকে ২০ দিন। এরপর ইউরোপের আরও দুই গন্তব্যে আগামী মাসে সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর ঘোষণা দেয় সুইজারল্যান্ডের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কমোডিটি সাপ্লাইস এজি। তারা আগামী মাসে চট্টগ্রাম থেকে স্পেন ও নেদারল্যান্ডসে সরাসরি কনটেইনার পণ্য পরিবহনের জন্য তিনটি জাহাজ নামাচ্ছে।
সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর উদ্যোগে নীতিগত সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম বন্দর। সেজন্য একের পর এক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তাতে সিঙ্গাপুরের সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে রপ্তানিতে নির্ভরশীলতা কমবে। কারণ বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ-আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার প্রথমে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুং পেলাপাস বন্দরে নেওয়া হয়। এই চারটি বন্দরে নামানোর পর বুকিং পেলে ইউরোপ-আমেরিকামুখী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এভাবে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার বন্দর ঘুরে ইউরোপের দেশে কনটেইনার পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪-২৮ দিন। তবে করোনার পর থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় লাগছে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি।