তাইওয়ানের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী: তাইওয়ান প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সীমিত সংখ্যক সদস্য তাইওয়ানে স্থানীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।
এর মাধ্যমে আরও নিশ্চিত হলো যে স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটিতে আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের উপস্থিতি রয়েছে।
বহুদিন ধরেই তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজমান রয়েছে। চীন দ্বীপটিকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করলেও তাইওয়ান তা স্বীকার করে না। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের উপর সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করার বদৌলতে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনাও নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
বৃহস্পতিবার সিএনএনে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে সাই বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত পরিসরে সহযোগিতা চলছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।"
তবে তাইওয়ানে কী পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে সাই কেবল বলেন, "মানুষ যে পরিমাণ ভাবছে, অত বেশি নয়।"
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে চীন তাইওয়ানের উপর সামরিক চাপ বৃদ্ধি করেছে। তারা তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোনে বারবার নিজেদের যুদ্ধ বিমানের মিশন চালিয়েছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে তাইওয়ান প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই নিশ্চিত করলেন তাদের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের উপস্থিতি।
এর আগেও তাইওয়ানের স্থানীয় গণমাধ্যমসহ রয়টার্সের মতো কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও সংবাদ প্রচার করেছিল যে তাইওয়ানের সৈন্যরা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কিন্তু এতদিন এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
এদিকে সাইয়ের মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চিউ কুও-চেং প্রতিবেদকদের জানান, তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিথস্ক্রিয়া "বেশ বড় পরিসরে এবং ঘনঘন চলছে" এবং তা অনেকদিন ধরেই বিদ্যমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের [সামরিক] বিনিময়ে, যেকোনো ধরনের বিষয়েই আলোচনা হতে পারে।"
তবে তিনি আরও যোগ করেন যে সাই বলেননি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাইওয়ানে স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গেঁড়েছে বা বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের অবস্থানই দ্বীপটিতে চীনের সম্ভাব্য আক্রমণের কারণ হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
"সৈন্য বিনিময়ের সঙ্গে যুদ্ধের লক্ষ্যে সৈন্য মোতায়েনের কোনো যোগসাজশ নেই," চিউ বলেন।
১৯৭৯ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাইপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তখন তারা তাইওয়ান থেকে তাদের স্থায়ী সামরিক ঘাঁটিও প্রত্যাহার করে নেয়।
অবশ্য তাইওয়ান নিয়মিতই তাদের এফ-১৬ পাইলটদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে থাকে। অ্যারিজোনার লিউক এয়ার ফোর্স বেজে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।
অন্যান্য অধিকাংশ দেশের মতোই, যুক্তরাষ্ট্রেরও তাইওয়ানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্রই তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মিত্র, এবং তাদের অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী।
সাই বারবারই তাইওয়ানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে অভিহিত করেছেন, এবং অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যে নিজেদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করবেন তিনি।
চলতি মাসে তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতি এড়াতে তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং তাদের কাছে অস্ত্রও আর বিক্রি না করা।
- সূত্র: রয়টার্স