ফ্লয়েড হত্যায় ডেরেক চাওভিনের সাড়ে ২২ বছরের কারাদণ্ড
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে (৪৬) হত্যার দায়ে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনকে সাড়ে ২২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (২৫ জুন) এই রায় ঘোষণা করা হয়।
চাওভিনের সাজার বিষয়ে বিচারক বলেন, "আপনার আস্থা ও কর্তৃত্বের অবস্থানের অপব্যবহার এবং জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি নিষ্ঠুরতা থেকে" আপনাকে (চাওভিন) এই দণ্ড দেয়া হলো।
সাজার রায়ে ডেরেক চাওভিনকে 'প্রিডেটরি অফেন্ডার' হিসাবে তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজরদারি করে থাকে।
সেই সঙ্গে চাওভিনকে আজীবনের জন্য অস্ত্রের মালিক হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জর্জ ফ্লয়েডের পরিবার এবং তাদের সমর্থকেরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
আইনজীবী বেন ক্রাম্প টুইটে লেখেন, "এই ঐতিহাসিক রায় ফ্লয়েডের পরিবার এবং আমাদের জাতিকে পরিণতি ও জবাবদিহিতা অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাময়ের এক ধাপ কাছে নিয়ে গেছে"।
ফ্লয়েডের বোন ব্রিজেট ফ্লয়েড বলেন, "এই রায় প্রমাণ করে যে, পুলিশি বর্বরতার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া বাকি"।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এই রায়কে 'উপযুক্ত' মনে হয়েছে যদিও তিনি এর বিস্তারিত জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন।
গত বছরের ২৫ মে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা ফ্লয়েডের (৪৬) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি ২০ ডলারের একটি জাল নোট দিয়ে দোকান থেকে সিগারেট কেনার চেষ্টা করছিলেন। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ তাকে আটক করে। গ্রেপ্তারের সময় সড়কে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন টানা নয় মিনিট তার ঘাড়ের পিছনে হাটু দিয়ে চেপে বসলে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফুঁসে উঠে আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ। পৃথিবীজুড়ে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্লয়েডের পরিবার শহর কর্তৃপক্ষ, চাওভিন এবং ফেডারেল আদালতের সাথে জড়িত আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় বলা হয়, গ্রেপ্তারের পরপরই নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ফ্লয়েডের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন এই কর্মকর্তারা।
বিচারকাজ শুরু হলে চাওভিন গত এপ্রিলেই দোষী প্রমাণিত হন। প্রসিকিউটর স্টিভ শ্লেইচার আদালতে তার বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময় বলেন, "এটি পুলিশি কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে না। এটি হত্যাকাণ্ড"।
চাওভিনের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই আদালতে প্রমাণিত হয়। এগুলো হলো 'সেকেন্ড ডিগ্রি' অনিচ্ছাকৃত খুন, 'থার্ড ডিগ্রি' খুন এবং 'সেকেন্ড ডিগ্রি' নরহত্যা।
শুনানিতে যা বলা হয়েছে
আদালতে শুনানি চলাকালে জর্জ ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড পুলিশ কর্মকর্তা চাওভিনের সর্বোচ্চ সাজা, ৪০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি করেন।
তিনি বলেন, "আপনি কি ভাবছিলেন? আপনার পা দিয়ে যখন আমার ভাইয়ের গলা চেপে ধরেছিলেন, তখন আপনার মাথার মধ্যে ঠিক কি কাজ করছিল?''
ফ্লয়েডের সাত বছরের কন্যা জিয়ান্নাকে একটি ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায় যে, সে তার বাবার অভাব কতটা বোধ করছে।
বিচারক বলেছেন, এই মামলাটি পুরো সম্প্রদায় এবং দেশের জন্য বেদনাদায়ক, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য।
বিচারক পিটার কেহিল বলেন, ''আবেগ বা সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে এই সাজা দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি এটাও বলতে চাই, যে গভীর ও অবর্ণনীয় বেদনা পরিবারগুলো অনুভব করছে বিশেষ করে ফ্লয়েডের পরিবার, আমি সেটা অনুভব করতে পারছি"।
এদিকে আদালতে চাওভিন জানান, ফ্লয়েডের পরিবারের প্রতি তিনি তার সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "এই ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যতে হয়তো আরো কিছু তথ্য সবার সামনে আসবে"। তবে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি চাওভিন।
তার মা ক্যারোলিন পৌলেন্টি চাওভিনকে একজন 'ভাল মানুষ' হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ''তোমার নির্দোষিতার ওপর আমার সবসময়েই বিশ্বাস আছে এবং আমি সেখান থেকে কখনোই টলবো না।''
মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কেইথ এলিসন বলেছেন, ডেরেক চাওভিনের এই সাজা, ভয়াবহভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তার 'সবচেয়ে দীর্ঘ সাজার' অন্যতম।
- সূত্র- বিবিসি