ব্রেক্সিট প্রশ্নে ২৭ ভোটে হেরে গেলেন বরিস জনসন
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হেরে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিটনীতির বিরোধীরা মঙ্গলবার পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব তোলেন, যাতে ব্রেক্সিট আরও পিছিয়ে দিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে একটি বিচ্ছেদ-চুক্তি চূড়ান্ত করার সময় পাওয়া যায়।
হাউজ অব কমন্সের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ৩২৮ ভোট পড়ে। বিপক্ষে ছিল ৩০১ ভোট।
ফলে ওই প্রস্তাব টিকে যাওয়ায় আপাতত বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ চলে গেল এমপিদের হাতে। এখন তাদের জন্য ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’, অর্থাৎ কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে একটি বিল আনার সুযোগ তৈরি হল।
তবে ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনবেন।
প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)বেঁধে দেওয়া সর্বশেষ সময় অনুযায়ী,বিচ্ছেদ প্রশ্নে ব্রিটেন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারুক বা না পারুক, ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ-পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কর-কাঠামো কেমন হবে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ধরনই-বা কী হবে, সেসব বিষয় অনির্ধারিত থেকে যাবে। একে বলা হচ্ছে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’।
গত জুলাইয়ের শেষে প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর থেকে বরিস জনসন,কোনো চুক্তি হোক বা না হোক নির্ধারিত তারিখেই ব্রেক্সিট কার্যকর করার ব্যাপারে অনড় থাকার কথা বলেছিলেন।
কিছুদিন ধরে এ নিয়ে বেশ উত্তপ্ত ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গন। চুক্তিহীন বিচ্ছেদ চাইছেন না বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক আইনপ্রণেতাও। তারা মনে করছেন এটি যুক্তরাজ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
গ্রীষ্মের ছুটি শেষে মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে। শুরুতেই সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব আনে বিরোধী দল। জনসনের নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির ২১ জন সাংসদ, যাদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও রয়েছেন, এই ভোটাভুটিতে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন।
বিরোধিতা ঠেকাতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বরিস। তারপর এক সভায় তিনি জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির যারা বিরোধিতা করবেন তাদের দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। এ হুমকির পরও বিরোধী দলের কাতারে তার নিজ দলের বিদ্রোহী সাংসদরা যুক্ত হওয়ায় তিনি হাউজ অফ কমন্সের ভোটে হেরে গেলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এখন তাই বলা হয়েছে, যারা দলের মতের বিরোধিতা করছে, তাদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। কনজারভেটিভ পার্টির এই বিদ্রোহীদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী কেন ক্লার্কও রয়েছেন।
জনসন বলেছেন, বিরোধী এমপিরা যে বিল তুলেছেন, তাতে ব্রেক্সিট আলোচনার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাতে। তখন যে অনিশ্চয়তা আর বিভ্রান্তি ছড়াবে তাতে আখেরে ব্রিটেনের কোনো লাভ হবে না।