কে এই প্রধান বিচারপতি, যিনি ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন?
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ সাংবিধানিক কিনা সে বিষয়ে রায় দেবেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণী এই রায় হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল)। তবে, দ্বিতীয় দিনের মতো তা আবারও পিছিয়ে বুধবার (৬ এপ্রিল) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট তথা দেশটির প্রধান বিচারপতি প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ভাগ্যে কী ফয়সালা জুড়ে দেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
পাকিস্তানের বর্তমান ও ২৮তম প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল। এ বছরের জানুয়ারিতেই প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাকে নিয়োগের অনুমোদন দেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছর সেপ্টেম্বরে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার বৈধতার বিষয়ে তিনিই রায় দেবেন সুপ্রিম কোর্টে।
রোববার (৩ এপ্রিল) এ বিষয়ে বিচারপতি ওমর বলেন, "জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সূচিত সমস্ত আদেশ এবং পদক্ষেপ আদালতের আদেশ অনুযায়ী হবে।"
জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পরে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর দায়িত্বে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বন্দিয়ালের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। জাতীয় পরিষদের পরিস্থিতি তদারকি ও এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করবে এই বেঞ্চ।
ওমর আতা বন্দিয়াল
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল। ১৯৭৩ সালে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট মেরি একাডেমি থেকে তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে লাহোরের আইচিসন কলেজে থেকে হাইয়ার সিনিয়র কেমব্রিজ সার্টিফিকেট লাভ করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লাভ করেন ট্রিপোস ডিগ্রি। তিনি লন্ডনের লিংকন'স ইনে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
এরপর দেশে ফিরে ১৯৮৩ সালের দিকে লাহোরের উচ্চ আদালতে যোগদান করেন ওমর আতা বান্দিয়াল। সেইসঙ্গে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত লাহোরের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি ল কলেজে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও নেন। এরপর তিনি লাহোরের উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
এর কয়েক বছর পরেই পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত হন ওমর আতা বান্দিয়াল।
লাহোর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার, বাণিজ্যিক বিরোধ এবং জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন মামলায় তিনি লড়েছেন এবং জয়ী হয়েছেন। ২০১২ সালের জুনে লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
এরপর ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাকে নিয়োগের অনুমোদন দিলে ফেব্রুয়ারিতেই আইওয়ান-ই-সদরে এক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেন বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল।