'বিশ্বের সেরা স্নাইপার' ওয়ালি হতাশ হয়ে ইউক্রেন থেকে ফেরত এসেছেন!
রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ইউক্রেনে পৌঁছেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্নাইপার ওয়ালি। সম্প্রতি কুইবেক ফিরে তিনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিজের 'ভয়ানক হতাশার' অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গণমাধ্যমকে।
ওয়ালি নামে পরিচিত কানাডিয়ান এই স্নাইপার দাবি করেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অদক্ষতা, দুর্নীতির প্রবণতা, অপর্যাপ্ত অস্ত্র এবং দুর্বল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার কারণে ভারী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইউক্রেন।
গেল মার্চে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েছিলেন ওয়ালি। সেসময় পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল তাকে। স্প্যানিশ মিডিয়া তাকে 'বিশ্বের সেরা স্নাইপার' এর তকমা দিয়েছিল। মার্কিন মিডিয়ায়ও ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছিলেন তিনি।
তবে, এখন ফিরে এসে বাস্তবতা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন ওয়ালি। কানাডার কুইবেকে নিজের বাড়িতে ফিরে শুক্রবার (৬ মে) লা প্রেসকে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা প্রাথমিকভাবে জানেই না তার মতো বিদেশি যোদ্ধাদের কীভাবে যুদ্ধে কাজে লাগাতে হবে। যুদ্ধ করার সুযোগের অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে ওয়ালি কুইবেকের আরেকজন সাবেক সেনার নেতৃত্বে 'নরম্যান ব্রিগেড' নামের একটি প্রাইভেট ইউনিটে যোগ দিয়েছিলেন।
এই ব্রিগেডের বেশ কয়েকজন সদস্য লা প্রেসকে বলেন, ব্রিগেডের প্রধান যেরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী তারা অস্ত্রের সরবরাহ পাননি কখনই। এছাড়া, অনেককেই কোনো ধরনের প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এরপর ব্রিগেডের প্রায় ৬০ জন সদস্য দল থেকে বেরিয়ে নিজেদের মতো করে নতুন ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। লা প্রেসকে ওই ব্রিগেডের কমান্ডার জানান, কিছু সৈন্য আমেরিকার সরবরাহ করা ৫ লাখ ডলার মূল্যের অস্ত্রের চালান চুরি করে নিজস্ব ইউনিট গঠনের 'পরিকল্পনা করেছিল'।
ওয়ালি শেষ পর্যন্ত কিয়েভের কাছে যুদ্ধরত একটি ইউক্রেনীয় ইউনিটে যোগ দেন। তবে সেখানে যোগ দিয়ে তিনি অস্ত্র, খাবার এবং জ্বালানির অভাবে পড়েন। সেইসঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে একেবারে হতাশ হয়ে যান তিনি। এমনটিই জানিয়েছেন ওয়ালি গণমাধ্যমকে।
চলমান সংঘাতে ওয়ালিই একমাত্র স্বেচ্ছাসেবক নন যিনি যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেন ছেড়েছেন। রেডিটের 'ভলান্টিয়ারস ফর ইউক্রেন' ফোরামে নিয়োগপ্রাপ্তরা এবং যারা ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে আছেন তারাও অনেকটা একই অভিজ্ঞার কথা জানিয়েছেন।
প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে থাকা মানুষকে নিজের অস্ত্র দিয়ে নিখুঁত টার্গেট করতে পারেন ওয়ালি। ২০১৫ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ইরাকে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে স্নাইপার হিসেবে দুইবার আফগানিস্তানেও গিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী এই শার্পশুটার। আর সম্প্রতি স্ত্রী ও ছেলেকে কানাডায় রেখে রুশ বাহিনীর মোকাবেলা করতে পৌঁছেছিলেন ইউক্রেনে। তবে সেখান থেকে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর আগ্রাসন মোকাবেলায় বিদেশি যোদ্ধাদের স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে যেকোনো স্বেচ্ছাসেবক যোগ দিতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মূলত তার ডাকেই সাড়া দিয়ে ইউক্রেনে পৌঁছেছিলেন স্নাইপার ওয়ালি।
- সূত্র: আরটি নিউজ