নান্দনিক ভেসপা: ইতালিয়ান ক্লাসিকের ৭৬ বছর
হাল আমলে রাস্তায় বের হওয়া দুই চাকার গাড়িগুলোর দিকে মানুষ এক-দুবার চোখ তুলে দেখে। কিন্তু চাকার সংখ্যায় একই হলেও এ গাড়িটির দর্শক মাতানোর কোনো ক্ষমতা নেই। ঢাকার যানজটকে ভয়ানক গর্জন করে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়া দানবীয় দ্বিচক্রযানগুলোর মতো চওড়া ১৮ ইঞ্চি টায়ারও নেই এটির।
বরং এ যানটি দুটো ১০ বাই ৪ ইঞ্চি টায়ারের ওপর ভর করেই দিব্যি চলে। পুরোনো মডেলের অনেকগুলোতো স্রেফ আট ইঞ্চি টায়ারের ওপরই ভিত করে বানানো। ফাইবার গ্লাসের শরীর, অ্যান্থোপোমর্ফিক হেডলাইট; এসবের কোনো বালাই নেই এটিতে। বরং এর মসৃণ বঙ্কিম, স্টিলের দেহকাঠামো এ যুগেও এসে সেকেলে মনে হয় না।
এমনকি প্রায় ৭৬ বছর পর এসেও এ দ্বিচক্রযানটি সারাবিশ্বের মানুষকে এখনো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অনায়াসে পৌঁছে দিচ্ছে। কিছু মানুষের কাছে এ যানটি এখনো সমান জনপ্রিয়। তারা এখনো এটির কালজয়ী স্টাইল, নামের মাহাত্ম্য, নির্ভরশীলতা, ও সমগোত্রীয় ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্জন করা দীর্ঘকালীন সৌহার্দে ডুবে আছেন।
১৫০ সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনেই এর চলে যায়। ডিস্ক ব্রেক নেই তো কী হয়েছে, ড্রাম ব্রেকগুলো দিয়েই ঝটিতি থামানো যায় একে। আর রাস্তার ধাক্কা, কম্পন থেকে চালককে দূরে রাখতে পুরোপুরি সফল এর হাইড্রলিক সাসপেনশনও।
এ দ্বিচক্রযানের নাম ভেসপা। দ্য ভিঞ্চি, ফেরারি, আরমানি, মাস্ত্রোইয়ান্নি, ও সোফিয়া লরেনের মতো শিল্প, ফ্যাশন ও গ্ল্যামারের বিখ্যাত আইকনদের যে দেশ উপহার দিয়েছে, সেই ইতালির আরেকটি কালজয়ী সাংস্কৃতিক আইকন ভেসপা।
'রোমান হলিডে'তে একঘেয়েমিতে ভোগা রাজকন্যা অড্রে হেপবার্নকে নিয়ে রিপোর্টার গ্রেগরি পেকের রোমের রাস্তায় ভেসপায় চড়ে দুরন্তপনা যারা দেখেছেন, তারা সে দৃশ্য কোনোদিন ভুলবেন না। ওই সিনেমা হিট হওয়ার পর ভেসপাও কাল্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেল। সে মর্যাদা এখনো অটুট আছে। জাপান, চীন, ভারত ও তাইওয়ানে ভেসপাকে অনুকরণ করে স্কুটার নামে দুই চাকার মোটরসাইকেল বানানো হয়েছে। কিন্তু খাঁটি ভেসপা অনুরাগীর কাছে ভেসপা কেবল একটিই।
ভেসপার 'বাজ'
ভেসপা'র জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, ১৯৪৬ সালে। করাদিনো ডা আসকানিওর নকশায় ও পিয়াজো কোম্পানির বস এনরিকো পিয়াজোর নির্দেশনায় তৈরি হয় ভেসপা। এনরিকো পিয়াজো বুঝেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইতালির ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচলের জন্য ইতালিয়ানদের একখানা সস্তা দুই চাকার যানের বেশ দরকার।
ভেসপার প্রথম প্রোটোটাইপে দেখা গিয়েছিল ইতালীয় নব্যক্লাসিক ঘরানার বঙ্কিম নকশা, সরু দেহকাঠামোও মসৃণভাবে গোলাকার পেছনের ভাগ। ইঞ্জিনের শব্দে মনে হতো বুঝি কোনো বোলতা মেজাজ হারিয়ে ওড়াউড়ি করছে। চালকের হাতলগুলোকে ওই বোলতার শুঁড়ের মতোই দেখা যেত। বোলতাকে ইতালীয় ভাষায় 'ভেসপা' বলা হয়। সে নামেই রাখা হলো যানটির নাম। ভেসপা এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে নির্মাণের ১১ বছরের মাথায়, ১৯৫৬ সালে ১০ লাখ ভেসপা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম মডেলের পর ইঞ্জিন ও ব্রেক সিস্টেমে অনেক আপগ্রেড পেয়েছিল ভেসপা। ভেসপার ৩০০ সিসির ওয়াটার-কুল্ড ইঞ্জিন ও ডিস্ক ব্রেকসমৃদ্ধ মডেলও আছে। আধুনিক মডেলগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা রয়েছে ফলে চালককে আর বাঁ হাতে হ্যান্ডেলবার মুচড়িয়ে ক্লাচ লিভার টেনে প্রথম গিয়ার সচল হওয়ার শব্দ শুনতে ও অনুভূতি নিতে হয় না।
ভেসপার সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেলগুলোতে এখন ১২৫ ও ১৫০ সিসির ইঞ্জিন থাকে। আমাদের এখানে ইঞ্জিনের সক্ষমতাবিষয়ক অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উচ্চক্ষমতার ভেসপা আমদানি করা যায় না। তেল পোড়ানো, নীল ধোঁয়া ছড়ানো, গগনবিদারী শব্দের ইঞ্জিনের সেসব দিন এখন আর নেই। ইউরোপের কার্বন নিঃসরণ মাপকাঠির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এখনকার সব ভেসপা ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিনে চলে। কিন্তু ঢাকা শহরে এখনো চষে বেড়ানো ভিনটেজ ভেসপাগুলোর বেশিরভাগই ধোঁয়া ছড়ানো টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের। চার-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত ভেসপাও এ শহরে আছে, তবে সেগুলোর সংখ্যা বেশ কম।
আসলেই কেমন মজা ভেসপায়?
জাপানি ও ভারতীয় ব্র্যান্ডের স্কুটারই এখন রাস্তায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। জাপানি ব্র্যান্ডের স্কুটারগুলো আবার ভারতে তৈরি হয়। ঢাকা শহরে ১৯৬০-এর দশকে জনপ্রিয় ছিল ভেসপা। দুই-স্ট্রোকের ইঞ্জিনের শব্দ শুনে যে কেউ দূর থেকে ভেসপার আগমন টের পেত। ভেসপা চলে গেলেও বাতাসে নীলচে ধোঁয়ার একটা ছাপ কিছুক্ষণ থেকে যেত। তখনো পোড়া তেলের পরিবেশদূষণ নিয়ে পৃথিবীর কেউ মাথা ঘামায়নি, তাই ভেসপার নীল ধোঁয়াতেও কারও কোনো আপত্তি ছিল না।
হর্ন বাজানোর জন্য ওই ভেসপাগুলোতে কোনো ব্যাটারিও ছিল না। তাই ইঞ্জিনের গতির সঙ্গে ফ্লাইহুইল অল্টারনেটরের গতির পরিবর্তন হওয়ায় ভেসপার আওয়াজেরও ওঠানামা হতো। তখনকার দিনে বেশিরভাগ ভেসপা হতো গতানুগতিক নীল রংয়ের। তবে মাঝেমধ্যে দু-একটাকে এ নিয়ম ভেঙে অন্য রংয়ে রাস্তায় দেখা যেত।
১৯৭০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে নতুন ভেসপার আমদানি পড়ে যায়। এরপর ভারতের এলএমএল কোম্পানি এনভি ভেসপা তৈরি করা শুরু করলে সত্তরের দশকের শেষের দিকে আবারও ভেসপার আমদানি গতি পায়। আরেক ভারতীয় কোম্পানি বাজাজ চেতক নামে নিজেদের ভেসপা তৈরি করছিল। ওই বছরগুলোতে রাস্তায় বাজাজ চেতকেরও দেখা মিলত।
১৯৮০-এর দশকে একটা আনকোরা এলএমএল ভেসপা এনভি কিনতে গুনতে হতো ৪০,০০০ টাকা। ১৯৯৯ সালে এলএমএল ও পিয়াজো তাদের ভেসপা উৎপাদন চুক্তির সমাপ্তি টানে। এরপর ধীরে ধীরে দেশে নতুন ভেসপার আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। আজকের দিনে ঢাকা শহরে যে ভিন্টেজ ভেসপাগুলো দেখা যায়, সেগুলোর অধিকাংশই এলএমএলের তৈরি টিকে থাকা ভেসপা। আর আছে খুবই দুর্লভ অরিজিনাল ইতালির তৈরি ঠবংঢ়ধ ঠইই। যারা ভিনটেজ ভেসপাপ্রেমী, তাদের কাছে এই মডেলের ভেসপা একটি স্বপ্নের নাম।
এ দেশের একটি সুবৃহৎ বিজনেস কনগ্লোমারেট আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে, এমনই একটি ভেসপা ভিবিবিতে করে চলাচল করতেন। সেই ভেসপাটি আজ সযতনে সাজিয়ে রাখা আছে আকিজ গ্রুপের হেডঅফিসের লবিতে। তবে এখন ভেসপা কোম্পানি নিজেই ভারতে আধুনিক মডেলগুলো তৈরি করছে। স্থানীয় একটি সংযোজন কোম্পানি দেশে এগুলোর বাজারজাত করছে। তবে ১৯৮০-এর দিকে যে দামে একটি ভেসপা এনভি পাওয়া যেত, এখন তার দাম বেড়ে পাঁচগুণে ঠেকেছে।
তখনকার দিনে অনেক স্যুট-বুট পরা মানুষ ভেসপা চালাতে পছন্দ করতেন। ভেসপার স্টিলের তৈরি অর্ধেক ঘেরাও দেওয়া বডি রাস্তার ধুলোবালি ও কাদা থেকে তাদের জামাকাপড়কে রক্ষা করত। বর্তমানে সারা বিশ্বে ডিস্টিংগুইশড জেন্টেলম্যানস রাইড নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ভেসপা নিয়ে থ্রি-পিস স্যুট পরে ফুলবাবু সেজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন একদল মানুষ। তাদের চকচকে ভেসপা, অসামান্য পরিচ্ছদ, আর রূপের বাহার নিশ্চিতভাবে তাদের অন্যদের চেয়ে 'খানদানি' করে তোলে।
বাংলাদেশে ভেসপা ব্যবহারকারীদের অনেক ক্লাবও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর পাশাপাশি এসব ক্লাবের সদস্যরা প্রায়ই একসঙ্গে তাদের ভেসপা নিয়ে রাস্তায় বের হন।
ভিনটেজ ভেসপাকে প্রতিদিনের বাহন করা সম্ভব?
ভিনটেজ ভেসপা ব্যবহারকারীরা তাদের এ ইতালিয়ান মাস্টারপিসের প্রতি নিজেদের অনুরাগকে কীভাবে দেখেন? হাল আমলের অত্যাধুনিক মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় এটিকে একদমই আধুনিক বলা যাবে না। অনেক উদারচিত্তে দেখলেও কেউ ভেসপার নকশাকে সমসাময়িক হিসেবে রায় দিতে পারবে না। আধুনিক ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের ফিউয়েল ইনজেক্ট ইঞ্জিনের সঙ্গে ভেসপার কার্বুরেটেড ইঞ্জিনের কোনো মিল নেই। পাশাপাশি, আইডলিং করতে থাকা অবস্থায় ভেসপার টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন থেকে যে ট্যাং-ট্যাং আওয়াজ বের হয়, তা শুনে আজকাল কেউ ভ্রুকুঁচকে তাকাতে পারে, তবে আপনাকে হলফ করে বলতে পারি, ভিনটেজ ভেসপাপ্রেমীদের কাছে এর চাইতে মধুর সংগীত আর কিছু হতে পারেনা।
ভিনটেজ ভেসপার মালিক তার ভেসপাতেই সন্তুষ্ট। তার ভেসপা ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছোটে না, এর ২ঞ মিক্সিং অয়েল সহজে মেলে না, এর মাইলেজ দেখলে অন্য যেকোনো মোটরসাইকেল আরোহী কেঁদেই দেবেন; তারপরও ভিন্টেজ ভেসপার মালিক খুশি। তার 'বেবি'কে নিয়ে রাস্তায় চলার সময়টা তার কাছে সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত। হ্যাঁ, বেসিক ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলের কারণে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই এ ভেসপা মাঝরাস্তায় উল্টোপাল্টা আচরণ করতে পারে। বেশিরভাগ ভেসপার ওই প্যানেল আবার কাজই করে না। তবে সমস্যাগুলোও হয় বেশ সাদাসিধে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গিয়ার বা ক্লাচের তার ছিঁড়ে গেছে।
কখনো স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করলেই আবার সানন্দে ছুটে চলে এই ইতালিয়ান ক্লাসিক। স্পেয়ার পার্টসেরও অভাব নেই। বংশাল গেলেই চলে। সেখানে বেশকিছু দোকান আছে, যেগুলো ভেসপার বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ। টায়ার নিয়েও কোনো ঝামেলা নেই। ভেসপার যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর জন্য ঢাকা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক মেকানিক।
ভিনটেজ প্রেমিকদের কাছে এরা 'জাদুকর' নামে পরিচিত। যেকোনো শুক্রবার এ 'জাদুকর'দের কারখানায় গেলে দেখা যাবে সারি সারি ভিনটেজ ভেসপা ঠিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এগুলোর কাস্টমাররাও অনেকদিনের বাঁধা, তারা এসব কারখানায় তাদের ভেসপা ঠিক করাতে আসছেন কয়েক দশক ধরে। এ কাস্টমারেরা আবার একে অপরকে দিব্যি চেনেন। এদের অনেকেই একই ভেসপা ক্লাবের সদস্য। তারা একসঙ্গে রাইডেও যান।
ভেসপা ক্লাব বাংলাদেশ, চিটাগং ভেসপা ক্লাব, বাংলাদেশ ভেসপা কমিউনিটি; এরকম অনেকগুলো ক্লাব আছে ভেসপাপ্রেমীদের। এসব ক্লাবের সদস্যসংখ্যা কয়েক হাজার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিটি ক্লাবের রয়েছে সক্রিয় পাতা। এসব ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগটাও দারুণ। রাস্তায় যদি কারও কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে এসব পেজে পোস্ট দিয়ে দ্রুত সহযোগিতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন পেজের পোস্টগুলো পড়ে তা-ই বোঝা গেল।
এসব ভেসপাচালকেরা চান তাদের ভেসপার ওপর নিজেদের পছন্দমতো নকশা করতে। কিন্তু আইনের কারণে তারা ভেসপায় কোনো বাড়তি লাইট বা এরকম কিছু যোগ করতে পারেন না। অন্য কোনো ধরনের মডিফিকেশন আনাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ব্রিটেনে ভিনটেজ ভেসপা মানেই দারুণ সব পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য।
যেভাবে মডিফাই করা যায় ভেসপাকে
ব্রিটেনের বাজারে যখন প্রথম ভেসপা আসে, সময়টা ছিল মডিফিকেশনের উপযুক্ত সময়। খামখেয়ালিপনায় মেতে থাকা দ্রুতপরিবর্তনশীল ব্রিটিশ তরুণ প্রজন্মের তখন দরকার ছিল সহজ ও সস্তা কিছুর, আর ভেসপা এসবের উপযুক্ত সমাধান হিসেবে উদয় হলো। গাড়ির চেয়ে ভেসপা কিনতে তাদের কম খরচ করতে হতো, রাতের বেলা পার্টি থেকে ফেরার সময় গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও ঘরে ফিরতে তাদের অসুবিধা হতো না। ভেসপাগুলোতে ক্রোম প্লেটিং, বাড়তি রিয়ার ভিউ মিরর, পা-দানি ইত্যাদি জুড়ে দিয়ে সেগুলোকে মনের মতো সাজিয়ে নিত তারা।
১৯৬০-এর দশকের পর মূলধারার ব্রিটিশ যাপিত জীবনে ভেসপার উপস্থিতি ক্রমে বাড়তে থাকল। ব্রিটেনের টেলিভিশন ও সিনেমার তারকারা তাদের 'হিপ' মড ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইতেন। পর্দায় ও পর্দার বাইরে তাদের ভেসপায় চড়তে দেখা যেত। ভেসপার নতুন মডেলগুলোর বিজ্ঞাপনেও তারা থাকতেন, ভেসপার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা প্রমোট করতেও দ্বিধা করতেন না এ তারকারা। মার্কিন সেলিব্রিটিরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন না। গ্রেগরি পেক, হেনরি ফন্ডা ও অড্রে হেপবার্নের মতো তারকারা ভেসপার সঙ্গে এক ফ্রেমে ছবি তুলেছিলেন। তারকারদের সঙ্গে ভেসপার এ সম্পর্ক এর জনপ্রিয়তাকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
বাংলাদেশে ভিনটেজ ভেসপামালিকেরা প্রতি কয়েক বছর অন্তর তাদের প্রিয় ভেসপার গায়ে নতুন রং লাগিয়ে নিজেদের সান্তনা দেন। অনেকের অবশ্য মলিন হয়ে যাওয়া পুরোনো রংয়েই সই। কেউ কেউ বাইরে থেকে উচ্চক্ষমতার যন্ত্রাংশও আমদানি করেন।
নির্মাণে ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্কুটারপ্রেমীদের একটি আন্তর্জাতিক সাবকালচারে এখনো একদল অনুরাগীর উৎসাহ জোগাচ্ছে এ ভেসপা। ক্লাব মিটিংগুলোর তারিখ, দিনব্যাপী রাইড, ও লম্বা দূরত্বের যাত্রার জন্য এখনো ভিনটেজ ও রেট্রো রিমেক ভেসপাগুলোর সারি লেগে যায়। কিছু ম্যাগাজিন এখনো ভেসপা অনুরাগীদের মনের খোরাক জোগায়। কয়েক দশকের পুরোনো ভেসপাগুলোকে পুনরায় তাদের আদি মহিমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো 'রিস্টোরেশন' বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়।
জয়তু ভেসপা!