বার্সার জার্সিতে মেসির ১০টি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বার্সেলোনার জার্সিতে লিওনেল মেসির ১৭ বছরের বর্ণাঢ্য অধ্যায় এখন শেষ হতে চলেছে।
২০০৪ সালে অভিষিক্ত হওয়ার পর ক্লাবে যতকিছু দেওয়া সম্ভব তার সবই দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। লাল-নীল জার্সিতে মেসি ৭৭৮টি ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৭২ গোল, জিতেছেন ৩৫টি ট্রফি।
এর মধ্যে রয়েছে ১০টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৭টি কোপা দেল রে, ৮টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৩টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ও ৩টি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ শিরোপা।
ছয়বারের ব্যালন ডি'অর জয়ীর বর্ণাঢ্য বার্সেলোনা ক্যারিয়ারের ১০টি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।
প্রথম হ্যাটট্রিক
[বার্সেলোনা ৩-৩ রিয়াল মাদ্রিদ; ১০ মার্চ ২০০৭ ]
ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকের জন্য স্প্যানিশ ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মহারণটিকেই বেছে নিয়েছিলেন মেসি। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ২০০৭ সালের সেই ম্যাচ ছিল মেসির প্রথম এল ক্লাসিকোও। ম্যাচে বার্সার তিনটি গোলই করেছিলেন ১৯ বছর বয়সী মেসি।
১১ ও ২৮ মিনিটে প্রথম দুই গোল করার পর অতিরিক্ত সময়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে করেন ম্যাচের সমতাসূচক গোলটি। এই ম্যাচের পরই মেসির নাম ছড়িয়ে যায় সবার মুখে মুখে।
শ্রেষ্ঠ গোল
[বার্সেলোনা ৫-২ গেটাফে, ১৮ এপ্রিল ২০০৭]
১৪ বছর আগে কোপা দেল রে'র সেমিফাইনালে করা মেসির এই গোল এখনো তর্কসাপেক্ষে তার শ্রেষ্ঠ গোল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দিয়েগো ম্যারাডোনার 'শতাব্দী সেরা গোল'খ্যাত গোলটির সাথে মিল রয়েছে এই গোলের।
নিজের অর্ধ থেকে বল নিয়ে মেসি পাঁচ ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে কাটিয়ে করেছিলেন এই বিখ্যাত গোল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্রথম গোল
[বার্সেলোনা ২-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ২৭ মে ২০০৯]
এখন হয়তো বিশ্বাস হবে না আপনার, কিন্তু এক সময় ইংলিশ দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে পারেন না- এরকম কটুকথাও শুনতে হয়েছে মেসিকে। নিন্দুকদের মুখে কুলুপ আঁটতে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচটিই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলের জয় নিশ্চিতকারী গোলটি করেছিলেন মেসি। ম্যাচের ৭০ মিনিটে জাভির ক্রসে তিনি মাথা ছুঁয়েছিলেন বিশাল এক লাফ দিয়ে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বিপক্ষে এটি ছিল মেসির প্রথম ম্যাচ।
দুই বছর পর ইউনাইটেডের বিপক্ষে আরেকটি চ্যাম্পিয়ন লিগ ফাইনালেও গোল করেছিলেন মেসি।
আর্সেনালের জালে ৪ গোল
[বার্সেলোনা ৪-১ আর্সেনাল; ৬ এপ্রিল ২০১০]
২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো চার গোলের দেখা পান মেসি। চার গোলের মধ্যে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে পাঠানো তৃতীয় গোলটি ছিল সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন।
দুই বছর পর এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই বায়ার লেভারকুসেনের জালে পাঁচবার বল জড়ান মেসি। বর্তমানে ১২০টি গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এই আর্জেন্টাইন।
বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড
[বার্সেলোনা ৫-৩ গ্রানাডা; ২০ মার্চ ২০১২]
মাত্র ২৪ বছর বয়সেই বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান মেসি। স্মরণীয় সেই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে।
গ্রানাডার বিপক্ষে করা প্রথম গোলটি দিয়েই সিজার রদ্রিগেজের ২৩৪ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন মেসি। দ্বিতীয় গোলটি দিয়ে রদ্রিগেজকে ছাড়িয়ে যান, এবং সেই ঐতিহাসিক রাতটিকে পূর্ণতা দিতে আরেকটি গোল দিয়ে সম্পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিকও।
বছরে ৯১ গোল
[রিয়াল ভায়াদলিদ ১-৩ বার্সেলোনা; ২২ ডিসেম্বর ২০১২]
এক বছরে ৫০ গোল করাকেই যখন অতিমানবিক হিসেবে দেখা হয়, তখন ৯১ গোলের একটি বছরের জন্য যথার্থ বিশেষণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
২০১২ সালে বার্সেলোনার হয়ে ৭৯ বার ও আর্জেন্টিনার হয়ে ১২ বার গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মেসি। ওই গোলে ভরা মৌসুমের পরই টানা চতুর্থ ব্যালন ডি'অরটি ঘরে তোলেন তিনি।
লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা
[বার্সেলোনা ৫-১ সেভিয়া; ২২ নভেম্বর ২০১৪]
এই গোলের রেকর্ডটিও মেসি ভেঙেছিলেন হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে। টেলমো জারার ২৫২ গোলের রেকর্ড তিনি স্পর্শ করেছিলেন একটি ফ্রিকিকের সাহায্যে। এরপর দ্বিতীয় গোল দিয়ে সেই রেকর্ড ভাঙেন, এবং হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে নিজেকে আরেকটু এগিয়ে নেন।
এখন মেসির লা লিগা গোলসংখ্যা ৪৭৪টি। দ্বিতীয় স্থান রোনালদোর, ৩১১টি গোল নিয়ে।
বার্সার জার্সিতে ৫০০তম গোল
[রিয়াল মাদ্রিদ ২-৩ বার্সেলোনা, ২৩ এপ্রিল ২০১৭]
মাঝে মধ্যে কিছু মুহূর্ত সিনেমার স্ক্রিপ্টকেও হার মানায়। ফুটবল বিশ্বকে এমনই এক মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন মেসি, বার্সেলোনার জার্সিতে নিজের ৫০০তম গোলটি করে। ২০১৭ সালের সেই এল ক্লাসিকোর অতিরিক্ত সময়ে বক্সের এক প্রান্ত থেকে শট নিয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দিয়ে দলের জন্য জয়সূচক গোলটি করেন তিনি।
গোলের পর জার্সি খুলে বার্নাব্যুর দর্শকদের দেখিয়ে করা মেসির সেই উদযাপনও ফুটবল ঐতিহ্যের অবিস্মরণীয় অংশ হয়ে গেছে।
ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর
[প্যারিস, ২ ডিসেম্বর ২০১৯]
মেসি তার ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর বাক্সবন্দি করেন ২০১৯ সালে। ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সম্মাননা হিসেবে খ্যাত এই পদক মেসির চেয়ে বেশিবার জিতেনি কেউই।
আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের পর এ বছরও ব্যালন ডি'অরের দৌড়ে এগিয়ে আছেন মেসি।
পেলেকে ছাড়িয়ে
[রিয়াল ভায়াদলিদ ০-৩ বার্সেলোনা, ২২ ডিসেম্বর ২০২০]
গতবছর বার্সা ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ক্লাবের হয়ে আরও ৩৮টি গোল করেন মেসি। বার্সায় ১২ মাস বেশি থাকায় ঐতিহাসিক একটি রেকর্ড ভাঙার সুযোগ পান তিনি।
সান্তোসের হয়ে পেলের ৬৪৩ গোলকে বহুকাল পর্যন্ত দেখা হয়েছে একটি অস্পৃশ্য রেকর্ড হিসেবে। ভালাদলিদের বিপক্ষে জয়ের রাতে মেসি বার্সার জার্সিতে তার ৬৪৪তম গোলের দেখা পান, এবং ছাড়িয়ে যান কিংবদন্তি পেলের এক ক্লাবের হয়ে করা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
-
সূত্র: বিবিসি