হতাশার ব্যাটিং-বোলিংয়ে হারে শুরু বাংলাদেশের
বল হাতে তাসকিন, নাসুম, মিরাজরা লড়লেও বাকিরা সেটা করতে পারলেন না। মুস্তাফিজ, হাসানরা থাকলেন অনুজ্জ্বল, খরচা করলেন অনেক রান। মোহাম্মদ রিজওয়ানের দারুণ ইনিংসে পাকিস্তান পায় লড়াকু সংগ্রহ। সেই রান পাড়ি দিতে নেমে চরম হতাশার ব্যাটিং করলো বাংলাদেশ। লিটন, আফিফ, ইয়াসিরদের লড়াই হারের ব্যবধান কমালো মাত্র।
শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭ টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের ১৪তম হার। দলটির বিপক্ষে ২টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, সর্বশেষ জয় ২০১৬ সালে। এরপর এই ম্যাচসহ টানা সাত ম্যাচে হারলো তারা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ানের দারুণ ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান তোলে বাবর আজমের দল। জবাবে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধুঁকেছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য নাগালে থাকলেও হতাশার ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ১৪৬ রানে শেষ হয় নুরুল হাসান সোহানের দলের ইনিংস।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এমন পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই চিন্তা বাড়াবে বাংলাদেশের। পেস আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র মুস্তাফিজ ৫০ ছুঁইছুঁই রান খরচ করেও উইকেটের দেখা পাননি। হাসানও ছিলেন বেশ খরুচে। ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটি চিন্তার কারণ হয়েই থেকে যাচ্ছে। চার ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধন করা মিরাজ দুই ম্যাচে আস্থার দাম দিতে পারলেও সাব্বির রহমান সংগ্রামই করে যাচ্ছেন। পরের ব্যাটসম্যানরাও আশা জাগানিয়া কিছু করতে পারছেন না।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের পাওয়া ইয়াসির আলী রাব্বির ব্যাটিং। সাত নম্বরে নেমে ঝড়ো এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২১ বলে ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। অবশ্য নিশ্চিত হারের মুখে চাপহীন ব্যাটিংয়ে এমন ইনিংস নিয়ে স্বস্তি পাওয়ারও সুযোগ নেই বাংলাদেশের।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশের দুই ওপেনার মিরাজ ও সাব্বির। ৪.২ ওভারে ২৫ রানের জুটি গড়েন তারা। ১১ বলে ১০ রান করা মিরাজের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। কিছুক্ষণ পর সাজঘরে ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করা সাব্বির। হারিস রউফের বলে দৃষ্টিকটুভাবে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি।
এরপর চাপ কাটিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন লিটন কুমার দাস ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। লিটন ২৬ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করে আউট হন। পরের বলেই ফিরে যান রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এরপর আফিফও পারেননি টিকতে। ২৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করে আউট হন তিনি।
হারের ব্যবধান কমেছে ইয়াসিরের ব্যাটে। শেষ দিকে নেমে ঝড়ো ব্যাটিং করেন তিনি। ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক সোহান ৯ বলে ৮ রান করে আউট হন। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম ৪ ওভারে ২৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট নেন মোহাম্মদ নওয়াজ। একটি করে উইকেট পান শাহওয়াজ দাহানি, হারিস রউফ ও শাদাব খান।
এর আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সাবধানী শুরু করতে বাধ্য করেন তাসকিন। প্রথম ওভারে তার খরচা মাত্র এক রান। কিন্তু পরের ওভারে মুস্তাফিজ দেন ১০ রান। তৃতীয় ওভারে দুই চারসহ হাসান দেন ৯ রান। চতুর্থ ওভারটি বেশি হতাশার, এক ছক্কাসহ নাসুম দেন ৭ রান। রানের দিক থেকে খরুচে না হলেও নিশ্চিত রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন সাব্বির রহমান।
মুস্তাফিজ-হাসানদের গড়পড়তা মানের বোলিংয়ে মানিয়ে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন বাবর-রিজওয়ান। বাবরকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। এদিন টি-টোয়েন্টির মতো করে ব্যাটিং করতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক, ২৫ বলে ৪টি চারে ২২ রান করেন তিনি।
এরপর শান মাসুদের সঙ্গে জুটি গড়েন রিজওয়ান, আসে ৪২ রান। নিউজিল্যান্ডের স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হলেও এই জুটি ভাঙেন আরেক স্পিনার। ২২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রান করা শানকে ফেরান নাসুম। লাফিয়ে দারুণ ক্যাচে শানকে তালুবন্দী করেন হাসান। এরপর হায়দার আলী দ্রুতই ফেরেন। তাসকিনের বলে চোখ জুড়ানো ক্যাচে তাকে ফেরান ইয়াসির।
তবে রিজওয়ান দাপুটে ব্যাটিং করে যেতে থাকেন। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখা পাকিস্তানের এই ওপেনার। ডানহাতি এই ওপেনার ৫০ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। ইফতিখার আহমেদ ১৩, আসিফ আলী ৪ ও মোহাম্মদ নওয়াজ ৮ রান করেন।
৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন তাসকিন। নাসুম আরও কৃপণ ছিলেন, ৪ ওভারে ২২ রানে এক উইকেট নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ২ ওভারে ১২ রানে মিরাজের শিকার এক উইকেট। হাসান ৪ ওভারে ৪২ রানে নেন একটি উইকেট। সবচেয়ে খরুচে মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪৮ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন। মোসাদ্দেকও সুবিধা করতে পারেননি, ২ ওভার ১৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট নিতে পারেননি তিনি।