ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের বড় হার
'আমাদের ব্যাটসম্যানরা যেমন ফর্মে আছে, যেভাবে ব্যাটিং করছে; সহজেই আমরা এই লক্ষ্য পাড়ি দিতে পারবো'- বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার পর ইনিংসের বিরতিতে এভাবেই প্রত্যশার কথা জানান পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ। হলোও তেমনই, ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে কোনো বেগই পেল না পাকিস্তান। প্রতিপক্ষের পেস আক্রমণে কুপোকাত বাংলাদেশ বল হাতে দারুণ করলেও লাভ হলো না, মেনে নিতে হলো বড় হার।
বুধবার এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের আসরে বাংলাদেশের শুরু হয় হার দিয়ে, দ্বিতীয় ধাপও শুরু হলো হারে। ৩৮ ওয়ানডেতে এটা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩৩তম হার। দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৫টি। ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ১৪ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের ১৩তম হার, জয় মিলেছে একটি ম্যাচে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাজে শুরুর পর দ্রুততার সঙ্গে আরও তিন উইকেট হারানো দলটির পক্ষে কেবল লড়াই করতে পেরেছেন দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। দারুণ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৪০ ওভারও পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা হারিস, নাসিম শাহদের বোলিংয়ের মুখে ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ইমাম-উল-হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৯.৩ ওভারে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা বলার মতো ছিল না পাকিস্তানের। দলীয় ৩৫ রানে ওপেনার ফকর জামানকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ৩১ বলে ২০ রান করেন অনেকদিন ধরেই রান খরায় থাকা ফকর। পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের প্রধান অস্ত্র বাবর আজমও এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২২ বলে ১৭ রান করে তাসকিন আহমেদের বল বোল্ড হন পাকিস্তান অধিনায়ক।
৭৪ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে ১৫৯ রান পর্যন্ত নিয়ে যান ইমাম ও রিজওয়ান, তৃতীয় উইকেটে ১০৪ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন তারা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া ইমাম ৮৪ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৮ রান করে আউট হন। আগা সালমানকে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন ৭৯ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় হার না মানা ৬৩ রান করা রিজওয়ান। সালমান অপরাজিত থাকেন ১২ রানে। বাংলাদেশের তাসকিন, শরিফুল ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুতেই হোঁচট খায়। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা, আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মেহেদী হাসান মিরাজ এদিন প্রথম বলেই আউট। নাসিম শাহর বলে অনেকটা ক্যাচ অনুশীলন করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর চাপ কাটিয়ে ভালো খেলতে শুরু করেন নাঈম শেখ ও লিটন কুমার দাস।
কিন্তু পাকিস্তানি পেসারদের তোপে তারাও বেশি সময় টিকতে পারেননি। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা লিটন চরম হতাশা জাগিয়ে আউট হন। পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে একাদশে ফেরা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, ১৩ বলে ৪টি চারে ১৬ রান করেন তিনি।
অষ্টম ওভারে হারিস রউফের ১৪০ কি.মি গতির শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তোলেন নাঈম। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরেন হারিস। ২৫ বলে ২০ রান করে থামেন নাঈম। ইনিংসের দশম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়ের স্টাম্প উপড়ে নেন হারিস। ৯ বলে ২ রান করেন আগের ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেওয়া হৃদয়। ৪৭ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে অন্ধকারে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এখান থেকে দলের হাল ধরে অনেকটা পথ পাড়ি দেন অধিনায়ক সাকিব ও মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ১০০ রানের জুটি গড়ে হতাশাজনক শট খেলে আউট হন সাকিব। এর আগে তিনি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন, যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিছুক্ষণ পর মুশফিক পূর্ণ করেন তার ৪৬তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি।
সাকিবের আউটের পর ২৭ রানের ছোট জুটি গড়েন মুশফিক ও শামিম হোসেন পাটোয়ারী। অপ্রয়োজনীয় শট খেলে শামিম আউট হওয়ার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার। দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা শামীম ২৩ বলে ১৬ রান করেন। শেষ ভরসা মুশফিক ৮৭ বলে ৫টি চারে ৬৪ রান করে আউট হন। ভালো শুরু করা আফিফ হোসেন ধ্রুব ১২ বলে ১১ রান করেন।
পাকিস্তানি পেসারদের নিয়েই যতো ভয় ছিলো বাংলাদেশের। আর সেই ভয়ই শেষ পর্যন্ত বাস্তব হয়ে দেখা দিলো বাংলাদেশ শিবিরে। পাকিস্তানি চার পেসার মিলে নেন বাংলাদেশের ৯ উইকেট। শাহিন শাহ আফ্রিদি একটি উইকেট পেলেও হারিস গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৬ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন তিনি। নাসিম ৫.৪ ওভারে ৩৪ রানে ৩টি উইকেট পান। ফাহিম আশরাফ ও ইফতিখার আহমেদ একটি করে উইকেট পান।