আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিমের আকস্মিক অবসর
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর আজ বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছেন তামিম।
তামিমের অবসের ঘোষণা নিয়ে গুঞ্জন জোরালো হয় গতকাল রাতে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের নিয়ে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলন করার ডাক দেন তামিম। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার অবসর নিচ্ছেন কিনা, তখন থেকেই তামিম জল্পনা কল্পনার শুরু।
শেষ পর্যন্ত সেই ধারণাকেই সত্যি প্রমাণ করলেন তামিম। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক কান্নাজড়িত কন্ঠে বিদায় জানিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন তিনি। এখন আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচেই দেখা যাবে না তাকে।
সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দিয়ে তামিম বলেছেন, 'আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ ১৬ বছরের পথচলায় যারা সাহায্য করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তামিম। সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরবর্তী জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তামিম। বলেছেন, 'জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।'
এক নজরে তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের ঘরের মাঠে এই সংস্করণেই তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন দেশসেরা এই ওপেনার।
২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬২ গড়ে ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন তামিম। রানের মতো সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতেও বাংলাদেশের মধ্যে সবার উপরে তিনি।
৭০ টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৮৯ গড়ে ৫ হাজার ১৩৪ রান করেছেন তামিম। যা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয়। সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন তিনি, হাফ সেঞ্চুরিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে।
৭৮ টি-টোয়েন্টিতে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৬৫ গড়ে তামিমের রান ১ হাজার ৭৫৮ রান। যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয়। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরিটি তামিমের।
অধিনায়ক তামিম:
২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্বের স্বাদ পান তামিম। নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দেন তিনি। দুই বছর পর ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ মেলে। মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটের কারণে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়কত্ব করেন তামিম।
পরের বছরই স্থায়ীভাবে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব পান তামিম। মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়লে অধিনায়কত্ব পান তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তিন বছরের পথচলায় দারুণ সফল অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ২১টিতে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। অন্তত ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাফল্যের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তামিমই।