সর্বনিম্ন রানের লজ্জার সঙ্গে জুটলো বিশাল হারও
দুই ফরম্যাটের লড়াইয়ে কতোই না বৈপরীত্য! ব্যাটে-বলে শাসন করে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশরেই কী করুণ হাল টেস্ট সিরিজে। সামান্যতম লড়াইও এখানে হয়ে উঠলো পরম আরাধ্যের বিষয়। যে স্পিনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করায় বাংলাদেশের জুরি নেই, সেই স্পিনেই এবার রচিত হলো অস্বস্তির এক অধ্যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও সাইমন হার্মানের স্পিন ছোবলে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ মেনে নিলো বড় হার।
ডারবানের কিংসমিড স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে ২২০ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৫৩ রানেই গুটিয়ে যায় মুমিনুল হকের দলের দ্বিতীয় ইনিংস। এতে অস্বস্তির এক রেকর্ডে নাম উঠেছে বাংলাদেশের। টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে এটাই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস।
আগের সর্বনিম্ন ছিল ৯০ রানের, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ২০১৭ সালে। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের পাশাপাশি কিংসমিড স্টেডিয়ামেও সর্বনিম্ন রান করার অস্বস্তি সঙ্গী হলো বাংলাদেশের। চতুর্থ ইনিংসে এই মাঠের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা এটাই।
ওয়ানডে ও টেস্টের বৈপরীত্যের মতো দুই ইনিংসের লড়াইয়েও অনেক পার্থক্য। প্রথম ইনিংসের পিছিয়ে থাকলেও লড়ছিল বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয়ের দারুণ সেঞ্চুরির সঙ্গে লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্তদের ছোট ছোট ইনিংস মূল্য যোগ করেছিল। সেই দলটিই দ্বিতীয় ইনিংসে অচেনা পথে হেঁটে মেনে নিলো বড় হার। যেখানে কেবল বাংলাদেশের দুজন ব্যাটসম্যান করতে পারলেন দুই অঙ্কের রান, বাকিদের রান রীতমতো মোবাইল নম্বর! ছোট্ট ইনিংসে চলেছে শুধু আসা-যাওয়ার মিছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুইজন বোলার মিলেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন, দুজনই স্পিনার। এ জন্য তাদেরকে বোলিং করতে হয়েছে মাত্র ১৯ ওভার। দুজন হলেও একটি নাম বড় করে; কেশব মহারাজ। প্রোটিয়াদের বাঁহাতি এই স্পিনার ১০ ওভারে ৩২ রান খরচায় ৭টি উইকেট তুলে নেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা মহারাজের এটা টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
মহারাজের সঙ্গে স্পিন ভেল্কি দেখানো সাইমন হার্মারও ছিলেন দুর্বার। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামিয়েছিলেন তিনিই। বাংলাদেশের ৪টি উইকেটই ছিল তার শিকার। ওই ইনিংসে উইকেটশূন্য ছিলেন মহারাজ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তার স্পিন মায়াজালে দিশা না পেয়ে ৫০ এর ঘরেই অলআউট বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রথম আঘাত হানা হার্মার ৯ ওভারে ২১ রানে ৩টি উইকেট নেন। ম্যাচ ৭ উইকেট ও ৪৯ রান করে প্রত্যাবর্তন পর্বটা রাঙিয়ে নিলেন তিনি। ২০১৫ সালের পর প্রোটিয়াদের হয়ে টেস্ট খেললেন তিনি।
টস টিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন মুমিনুল হক। আগে ব্যাটিং করতে নেমে অধিনায়ক ডিন এলগার ও টেম্বা বাভুমার হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ১০ উইকেটে ৩৬৭ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। খালেদ আহমেদ ৪টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি ও এবাদত হোসেন ২টি উইকেট নেন। জবাবে মাহমুদুল হাসান জয়ের ১৩৭ রানের সুবাদে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৯৮ রান তোলে। প্রোটিয়া স্পিনার সাইমন হার্মার ৪টি, লিজাড উইলিয়ামস ৩টি এবং ডুয়ানে অলিভিয়ার ও ভিয়ান মুলডার একটি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসেই ৬৯ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা। তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ২০৪ রানে থামলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৪ রান। এই ইনিংসে মিরাজ ও এবাদত ৩টি করে উইকেট নেন। ডান কাঁধে চোট নিয়েও বোলিং করা তাসকিন আহমেদ ২টি উইকেট নেন।
বাংলাদেশের সামনে ছিল ২৭৪ রানের লক্ষ্য। খুব বড় নয়, টেস্টের চতুর্থ ইনিংস বলে এটাকে চোট করে দেখার সুযোগও নেই। এ ছাড়া এতো রান পাড়ি দিয়ে টেস্ট জেতার অভিজ্ঞতাও নেই বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে ডারবান টেস্ট বাঁচানো নিয়ে ভয় ছিল সফরকারীদের। সেই ভয়ের কারণ হয়ে ওঠেন কেশব মহারাজ।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন। শুরুতেই স্পিন ছোবলে মুশফিককে ফিরিয়ে দেন মহারাজ। দারুণ এক ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মহারাজ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মুশফিক। দলের দুঃসময়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিতে হয় অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানকে।
কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ান মহারাজ। তার ববেল অনেকটা ক্যাচ অনুশীলন করে মিড অনে ধরা পড়েন লিটন কুমার দাস। এরপর ইয়াসির আলী রাব্বিও টিকতে পারেননি মহারাজের শাসনের সামনে। প্রোটিয়া স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর উইকেট উৎসবে যোগ দেন হার্মার। মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে দেন প্রোটিয়া ডানহাতি এই অিফ স্পিনার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্তকেও ফেরান তিনি। এরপর চোখের পলকেই বাকি দুই উইকেট তুলে নেন মহারাজ।
বাংলাদেশের ইনিংসে শান্ত সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন। ১৪ রান করেন তাসকিন আহমেদ। বাকিদের কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। পাঁচজন ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। জয় ৪, সাদমান ০, মুমিনুল ২, মুশফিক ০, লিটন ২, ইয়াসির ৫, মিরাজ ০, খালেদ ও এবাদত ০ রান করেন।
এরআগে চতুর্থ দিনের শেষভাগেও বাংলাদেশকে ভোগান মহারাজ। সাদমান ইসলাম অনিককে ফিরিয়ে শুরুটা করে দেনে সাইমন হার্মার। এরপর বাংলাদেশকে পেয়ে বসেন মহারাজ। বাঁহাতি এই স্পিনার কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে মাহমুদুল হাসান জয় ও মুমিনুল হককে নিজের শিকারে পরিণত করেন। তার স্পিন ভেল্কিতেই ৮ রানে ৩ উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশকে।