চরম হতাশার ব্যাটিংয়ে হোয়াইটওয়াশের অস্বস্তি
পাঁচ দিনের ম্যাচ, কিন্তু শত চেষ্টা করে সাড়ে তিন দিনও টেকা গেল না। আর এই তিন দিনে বাংলাদেশ শিবিরে কেবল করুণ সুরই বেজে গেল। প্রথম থেকে শেষ, পুরোটা হতাশায় মোড়ানো। বোলিংয়ে কিছু সাফল্য মিললেও ব্যাট হাতে অন্ধকারেই বাস করলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার শাসনে তটস্থ বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও মেনে নিলো বিশাল হাল। ডারবান টেস্টের মতো এখানেও ঘাতকের ভূমিকায় থাকলেন প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩২ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে মুমিনুল হকের দল। এই সফরে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতা দলটিই টেস্টে চরম হতাশার পারফরম্যান্স করলো। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশের সিরিজে বাংলাদেশ হারলো ২-০ ব্যবধানে, পড়তে হলো হোয়াইটওয়াশের অস্বস্তিতে।
বাংলাদেশকে ৪১৩ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রান পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা যে প্রায় অসম্ভব, সেটা দলের সবাই-ও বিশ্বাস করেছে। তবে এতো অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিশ্চিয়ই ছিল না বাংলাদেশ শিবিরে। বিশাল লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৮০ রানেই শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। যা নিজেদের দ্বিতীয় বা ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দুঃস্বপ্নের শুরু করা বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২৭ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে। বাকি ৭ উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিনের এক ঘণ্টাও পার করতে পারেননি মুমিনুলরা। ম্যাচ ও সিরিজসেরা কেশব মহারাজ ও আগের টেস্টের মতো তার সঙ্গে সুর মেলানো সাইমন হার্মারের স্পিন তোপে এদিন ৭ উইকেটে মাত্র ৫৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই স্পিনার দুই টেস্টেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে এমনভাবে ছোবল বসিয়েছেন, দিশা পাননি মুমিনুলরা। ডারবান টেস্টের ম্যাচসেরা ছিলেন মহারাজ। বাঁহাতি এই স্পিনার প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রানে নেন ৭ উইকেট। বাকি ৩ উইকেট যায় হার্মারের ঝুলিতে। দ্বিতীয় টেস্টে সেটারই পুনরাবৃত্তি। এই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেও মহারাজের শিকার ৭ উইকেট, হার্মারের ৩টি। এর আগে প্রথম ইনিংসে হার্মার ৩টি ও মহারাজ ২টি উইকেট নেন। বাঁহাতের স্পিনে বাংলাদেশকে দিকহারা করা মহারাজ দুই টেস্টে ১৬ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সিরিজ সেরা।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে প্রথম ইনিংসে করা দক্ষিণ আফ্রিকার রান দুই ইনিংস মিলিয়েও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৪৫৩ রানে প্রথম ইনিংস শেষ হয় স্বাগতিকদের। আর বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলে করেছে ৩৯৭ রান। যা প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৫৬ রান কম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২১৭ রানে অলআউট হওয়ার পরও ফলোঅন করাননি প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। ফলো অন করালে ইনিংস ৫৬ রানে জয় মিলতে পারতো, এটা ভেবে এখন তার আক্ষেপ হতেই পারে।
বাংলাদেশের দুটি ইনিংসের স্কোরকার্ডে হতাশার ছড়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ৫১, যা করেন মুশফিকুর রহিম। তিনিই আবার রিভার্স সুইপ খেলে দলকে মাজ দরিয়ায় রেখে সাজঘরে ফেরেন। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবা ৪৭ রান উল্লেখযোগ্য, ওই ইনিংসে তার আউটের ধরনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথম ইনিংসে এর বাইরে নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৩ ও ইয়াসির আলী রাব্বি ৪৬ রান করেন। লিটন দাস ও মেহেদেী হাসান মিরাজ করেন ১১ রান করে। বাকিরা উইকেটে গিয়েছেন আর ফিরেছেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে আরও করুণ হাল। এই ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন, ৩৩ বলে করেছেন ২৭ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান করেন মিরাজ। এ ছাড়া ১৩ রান করেন তামিম। বাকি কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। পাঁচ জন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দেওয়া মাহমুদুল হাসান জয় দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হন। অধিনায়ক মুমিনুল দুই ইনিংসে করেছে ১১ রান। সব মিলিয়ে চরম হতাশার এক সিরিজ শেষ করে দেশে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৪৫৩
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২১৭
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭৬/৬ (ডি.)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: লক্ষ্য ৪১৩, ২৩.৩ ওভারে ৮০ (তামিম ১৩, জয় ০, শান্ত ৭, মুমিনুল ৫, মুশফিক ১, লিটন ২৭, ইয়াসির ০, মিরাজ ২০, তাইজুল ০, খালেদ ০, এবাদত ০*, মহারাজ ৭/৪০, হার্মার ৩/৩৪)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩২ রানে জয়ী
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা: কেশব মহারাজ (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী