জানুয়ারি থেকেই ধাপে ধাপে সকল শিক্ষার্থী ‘ইউনিক আইডি’ পাবেন
প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীকে 'ইউনিক আইডি' প্রদান করতে যাচ্ছে সরকার।
লাইব্রেরি থেকে বই নেওয়া, রেজাল্ট হাতে পাওয়া, পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করা এবং বৃত্তিলাভ থেকে শুরু করে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের এই ইউনিক আইডি ব্যবহার করতে পারবে।
১৮ বছর হলে এই ইউনিক আইডিকেই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে রূপান্তর করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইউনিক আইডি বিতরণ শুরু করবে সরকার। কয়েকটি ধাপে দেশের সব শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের দেশের অভিভাবকদের সন্তানকে ক্লাসে প্রথম বানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কিন্তু সন্তানরা যথাযথ শিক্ষা লাভ করছে কিনা, সেদিকে তারা গুরুত্ব দেন না। ইউনিক আইডি দেওয়া হলে ক্লাস রোল নিয়ে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। ইউনিক আইডি মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে এই আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিতে পারবে।"
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্টিফিকেট ব্যবসা রোধে এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে ইউনিক আইডি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
নির্ধারিত সময়ের ভেতরে ইউনিক আইডি প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয়ের ভিত্তিতে তাদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে।
প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই মুহূর্তে দেশে মোট সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১.৬ কোটি শিক্ষার্থীকে প্রথমে ইউনিক আইডি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা 'ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট (আইইআইএমএস)' নামক একটি প্রকল্প শুরু করেছেন। এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনসহ ১৫ ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
আইইআইএমএস-এর প্রকল্প পরিচালক (মাধ্যমিক) শামসুল আলম জানান, এই মুহূর্তে তারা শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে তারা ডেটা এন্ট্রির কাজ শুরু করবেন।
"মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কিছু শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু আসছে জানুয়ারি থেকে ইউনিক আইডি বিতরণের কাজ পুরোদমে শুরু হবে", বলেন শামসুল আলম।
ইউনিক আইডি বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইউনিক আইডি বিতরণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আলম। শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য শিক্ষার্থীদের খোঁজ রাখতে এটি একটি আদর্শ উপায় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
"এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে খুবই ভালো হবে, শিক্ষার্থীরা আর ক্লাসে প্রথম হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে না। বরং এখন তারা ভালো নম্বর পাওয়া এবং আদর্শ শিক্ষার্থী হওয়ার দিকে মনোযোগ দিবে", বলেন অধ্যাপক মনজুরুল আলম।
তথ্য সংগ্রহ করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ইউনিক আইডির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়ে এটি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গাইডলাইনটি বুঝিয়ে দিতে এবং এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দু'জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ইউজিসি একটি ওয়ার্কশপ বা কর্মশালার আয়োজন করবে।
ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ) টিবিএসকে বলেন, নির্বিঘ্নে ইউনিক আইডি তৈরীর জন্য শিক্ষার্থীদের ডেটা ফাইল করার নির্দেশ দিয়ে তারা সকল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন।
তিনি বলেন, "অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসির নির্দেশ লঙ্ঘন করে থাকে, আবার অনেকেই নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। ইউনিক আইডি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছামতো ছাত্রদের ভর্তি করাতে পারবে না ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হবে"।
পিছিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম
এদিকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কোনো নির্দেশনা না পেলেও ইউনিক আইডি প্রোগ্রাম সম্পর্কে অবগত।
বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউজিসির কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রক্রিয়াট সম্পন্ন করতে তারা সময় নেবেন না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের ব্যস্ততা এডমিশন টেস্ট ঘিরে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।