তসলিমার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল
২০ জুলাই ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ‘ছেলেধরা’ অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত তসলিমা বেগম রেনুর পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট আজ একটি রুল ইস্যু করেছেন।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামালের বেঞ্চ একটি রিট পিটিশনের শুনানির পর এ আদেশ দেন।
ঘটনাটির জন্য ১২ জনকে দায়ী করে রুলে তাদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
২৮ জুলাই তসলিমার হত্যার জন্য ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। সে আবেদনে তিনি এটাও বলেছিলেন যে, এই অর্থের মধ্যে দশ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
গণপিটুনির জন্য শাস্তি ও গুজব ছড়ানোর জন্য দায়ী ফেসবুক পোস্টগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়ে এডভোকেট ইশরাত পরে আরেকটি আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শেষে গণপিটুনিতে নিহত রেনুসহ অন্যদের জীবনরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষের জীবনরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয় সোমবার।
রুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপিকে গণপিটুনির বিরুদ্ধে কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে ওই বেঞ্চে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
১৮ আগস্ট রেনুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা ও আরেক বড় বোনের ছেলে সৈয়দ নাসিরুদ্দিন টিটো ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। সে রিটের প্রেক্ষিতেই, হাইকোর্ট আজ ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন। এ আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, শিক্ষা সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার, বাড্ডা থানার ওসি, সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০ জুলাই বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে তাসলিমা বেগম রেনুকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে পিটিয়ে আহত করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাগনে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন টিটু।
রাজধানীর মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন রেনু। দু’বছর আগে স্বামীর সঙ্গে রেনুর বিচ্ছেদ হয়। তার ১১ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। ছেলেটি বাড্ডায় বাবার সঙ্গে থাকে।