বতসোয়ানায় রহস্যজনক কারণে মারা যাচ্ছে শত শত হাতি
দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মরুভূমি কালাহারি। এই মরুভূমির ঠিক প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বতসোয়ানা, বুনো হাতির আবাসস্থলের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কোন এক রহস্যজনক কারণে গত দু'মাস ধরে এখানে হাতিরা মারা যাচ্ছে গণহারে। হিসেব করে দেখা গেছে, মে মাস থেকে এপর্যন্ত ৩৫০টি হাতির শব পাওয়া গেছে।
কিছু কিছু মৃত হাতির ক্ষেত্রে দেখা গেল মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাটিতে। অর্থাৎ স্ট্রোক বা হঠাৎ কোন আঘাতে মাটিতে পড়ে গেছে। বেশিরভাগ হাতির মৃতদেহই পাওয়া গেছে ওকাভাঙ্গো ডেল্টার উত্তরাঞ্চলে জলাশয়ের কাছে। এই অঞ্চলের হাতিদের জন্য সুরক্ষিত এলাকা সেটা।
বিশ্বের বৃহত্তম হাতির (লক্সোডোন্টা আফ্রিকানা) আবাসস্থল বতসোয়ানা। এখানে এই হাতির সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্বব্যাপী এই অসাধারণ প্রাণীটি সংখ্যায় হ্রাস পাচ্ছে।
কিন্তু কেন এই হাতিরা মারা যাচ্ছে? মৃত হাতিদের শরীরে কোনপ্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
জিম্বাবুয়েতে যেমন হাতিদের সায়ানাইড বিষ প্রয়োগে হত্যা করে শিকারীরা, এখানে তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। কেননা এই মৃত হাতিদের মাংস খাওয়ার পর আশেপাশে কোন হায়েনা বা শকুনের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।
তবে কি কোন রোগ বা জীবাণুর আক্রমণে মারা যাচ্ছে হাতিরা?
বতসোয়ানায় গত বছর অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাবের ফলে ১০০টিরও বেশি হাতি মারা গিয়েছিল। আবার প্রবল খরার প্রভাবেও মারা গিয়েছিল বেশ কিছু হাতি। তবে এবার এরকম কোন কারণে হাতিরা মারা যাচ্ছে না বলে ধারণা করছেন বোতসোয়ানার সরকার।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই কয়েকটি হাতিকে একটি বৃত্তে ঘুরতে দেখা গেছে। স্নায়বিক কোন কারণে হাতিরা এমন আচরণ করছে বলে মনে করছেন তারা।
বতসোয়ানার বন্যপ্রাণী ও জাতীয় উদ্যান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সেরিল তাওলো গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছি, আশা করছি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল এসে পৌঁছাবে। কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধের কারণে এখন ল্যাব পেতে দেরি হচ্ছে, তাই এতটা সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে এত দেরি হচ্ছে কেন- এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাস্তুবিদ ও লায়নএইডের পরিচালক পিটার ক্যাট এবং অন্যান্য সংরক্ষণবাদীরা
সম্প্রতি নিজের ব্লগে পিটার লেখেন, 'হাতিদের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম চোখে পরার পর কয়েক মাস পার হয়ে গেছে, অথচ কেন তারা এভাবে মারা যাচ্ছে সেবিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।'
পর্যটনখাত বতসোয়ানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। এতে এই বন্যপ্রাণীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তাদের রক্ষায় দেশটির সরকার কোন দ্রুত উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে সমালোচনা করেন পিটার।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত হাতিদের অন্যতম নিরাপদ আবাসস্থল ছিল বতসোয়ানা। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশটিতে হাতির সংখ্যা কমছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। দেশটিতে হাতি শিকারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, গতবছর তা তুলে দিয়েছে দেশটির সরকার। হাতি জনসংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ন্যাশনাল পার্ক রেসকিউয়ের পরিচালক সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী নিয়াল ম্যাকক্যান বিবিসিকে বলেছেন, "খরা ছাড়া আর কোন কারণে হাতিদের এভাবে মারা যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। যদি কোন রোগে এমনটা হয়ে থাকে তবে তা শুধু হাতিদের জন্যই নয়, মানুষের জন্যও হুমকির কারণ হতে পারে।"
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট