ল্যাবে উৎপন্ন হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কফি, তবে মানুষ গ্রহণ করবে তো!
ফিনিশীয় বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ল্যাবে তৈরি পরিবেশবান্ধব কফি উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছেন। কফি বিন নয়, বরং কোষ কালচারের মাধ্যমে আসল কফির অনুরূপ গন্ধ এবং স্বাদ নিয়ে তৈরি হয়েছে এই কফি, এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কৃত্রিম এই কফি প্রস্তুত গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন হেইকো রিশার। তিনি ফিনল্যান্ডের ভিটিটি টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের উদ্ভিদ জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের দলনেতা।
ল্যাবে উৎপাদিত কফির স্বাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, "এটি বর্ণনা করা কঠিন; আমার কাছে মনে হয়েছে, এর স্বাদ কফি এবং ব্ল্যাক টির মাঝামাঝি"।
তবে, রিশার কফি পান করতে পারেননি। কারণ ল্যাবে তৈরি এই উদ্ভাবনটি এখনও জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয়। খানিকটা কফি মুখে নিয়ে, এর স্বাদ অনুভব করেই তিনি ফেলে দিয়েছেন।
রিশারের আশা, আগামী চার বছরের মধ্যে ভিটিটি'র ল্যাব উদ্ভাবিত এই কফি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাবে এবং বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে জনসাধারণের জন্য তা বাজারে উন্মুক্ত করা হবে।
কফি শিল্প জলবায়ু সংকটে অবদান রাখার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কফির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলছে বন উজাড়; যা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি প্রকৃতিতে কার্বন নিঃসরণেও অবদান রাখছে।
এছাড়া, কফি উৎপাদনকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার নানাধরণের প্রভাবের সঙ্গেও লড়াই করে চলেছেন। পরিবেশবিদদের মতে, জলবায়ু সংকটের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কফি চাষের জন্য ব্যবহৃত জমির অর্ধেকই হয়ে যেতে পারে অনুৎপাদনশীল।
কফি শিল্পের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই মূলত, বিজ্ঞানীরা কফি বিন ছাড়াই কফি তৈরি ও বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টা করছেন।
ভিটিটি'র দাবি, তাদের উৎপাদিত কফিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। তাছাড়া, তাদের এই উৎপাদন প্রক্রিয়াতে ব্যবহার করা হয়না কোনো ধরনের কীটনাশক। ফলে এই কফি খুব সহজেই স্থানীয় বাজারে উৎপাদন করা যেতে পারে, যা পরিবেশের জন্য পরিবহনজনিত নির্গমনও কমাতে সহায়তা করবে।
তবে, ল্যাবে উৎপাদিত কফির ক্ষেত্রে প্রধান সন্দেহের বিষয় হলো, ঠিক কতজন মানুষ কফি বিন ছাড়া কৃত্রিম উপায়ে তৈরি এই কফি পানে ইচ্ছুক হবেন!
২০১৯ সালে ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে, কানাডার ৭২ শতাংশ মানুষই বলেছেন তারা ল্যাবে উৎপাদিত কফি পান করবেন না।
আবার অনেক গবেষক মনে করছেন, ল্যাবে উৎপাদিত এই কফি বড় ধরণের আর্থ-সামাজিক সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও বড় করে তুলতে পারে।
কমিটি অন সাস্টেইনেবল অ্যাসেসমেন্ট-এর সভাপতি ও যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল জিওভানুচ্চি বলেন, "এটি এখনও স্পষ্ট নয়; শেষ পর্যন্ত, এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে"।
তিনি মনে করেন, যেসব মানুষ গতানুগনিক ধারায় কফি উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা ল্যাবে উৎপাদিত কফি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে ঝুঁকিতে পড়বেন। বিশেষ করে ইথিওপিয়া এবং ব্রাজিলের অনেক কৃষক, যারা বংশপরম্পরায় কফি চাষের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা নতুন এই উদ্ভাবনের ফলে নিজেদের কর্মসংস্থান হারাতে পারেন।
গবেষকদের মতে, ল্যাবে কফি উৎপাদন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। তবে, কফি চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষকদের ভবিষ্যৎ এবং কফি চাষের এই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষ কতটা গ্রহণ করবে তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান