সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যের ঘরে কখন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কোন পোস্টের নিচে আসা উটকো, অপ্রাসঙ্গিক কিংবা অযৌক্তিক মন্তব্য আসাটা ইদানীং একেবারেই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এসব মন্তব্যের জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হবে কিনা, বা লিখলেও কী লেখা উচিত সেটি কিন্তু কঠিন বিষয়।
এসব অযাচিত মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কীবোর্ডে ওঠে ঝড় আর নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়, কিন্তু আখেরে লাভ কিছুই মেলে না।
ওইয়্যার্ড ডটকম-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক এসটেল ইরেসমাস এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। তার আলোচনায় উঠে এসেছে মানুষের অনলাইন মন্তব্যের জবাব দেয়ার দিকটি।
নিবন্ধের শুরুতে এসটেল উল্লেখ করেন, সোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে যে নীতিবাক্যটি অনুসরণ করা উচিত তা হলো, 'অন্যের আগুনে ঘি ঢালবেন না'।
তিনি বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতামতও সংকলন করেছেন।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী এবং থ্রাইভার্স গ্রন্থের লেখক মিশেল বোরবার মতে, কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করাটাই একটি দুর্দান্ত প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেশ শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াও।
বোরবা বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো অপেক্ষাকৃত সহজ। কারণ এখানে কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না,"।
"কিন্তু কারো মুখের ওপর কিছু বলাটা খুব কঠিন, বিশেষ করে যখন কারো অপমান বা আঘাতের ইচ্ছে থাকে"।
বোরবা মনে করেন যারা সামাজিক মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে থাকেন, বা অযৌক্তিক কোন বিষয়ের তর্কে জড়াতে চান, তাদের অধিকাংশই মনোযোগ আকর্ষণের চিন্তা থেকে এমনটি করে থাকেন। এসব মন্তব্যের প্ররোচনাকারীরা সাধারণত বিরোধী চিন্তাধারার ব্যক্তিকে দুর্বল হিসেবে তুলে ধরতে চান।
এই পরিস্থিতিতে, তাদের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া না জানানোই বোধহয় সবচাইতে ভাল উপায়। এতে একদিকে যেমন সংঘাত এড়ানো সম্ভব, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টগুলোর মাধ্যমে তারা যে অযৌক্তিক মনোযোগ উৎপন্ন করতে চায় তা থেকেও বঞ্চিত করা হবে।
তবে কেউ যদি সত্যিই প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় তবে 'আমি এটির পিছনে যুক্তি বা গবেষণাটি দেখতে চাই' বা 'আপনার যুক্তির সপক্ষে কিছু গঠনমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করলে ভাল হয়' ইত্যাদি মন্তব্য করতে পারে। এর ফলে সেই উটকো মন্তব্যকারীর ওপর থেকে অনেকটাই মনোযোগ সরিয়ে আনা যাবে।
সাইবার বুলিং রিসার্চ সেন্টারের সহ-পরিচালক সমীর হিন্দুজা বলেন, "যখনই কেউ আমাদের অপমান করার চেষ্টা করে, আমরা তখন ব্যক্তি-নির্বিশেষে এমনভাবে এর প্রতিবাদ করি যেন তার সে মন্তব্য আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বের কিছু। এ ধরনের আচরণের মধ্য দিয়ে উলটো আমরাই কিন্তু তাদের আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষমতা দিয়ে দেই"।
হিন্দুজাও পরামর্শ দেন যে, এই পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এবং আগ্রাসন প্রদর্শন না করাই অনলাইনে দ্বন্দ্বের হাত থেকে বাঁচার একটি ভাল উপায়। অনলাইন তর্কে সত্যিই যদি কারো মনে হয় যে, নিজের অবস্থান বা মতামত তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে তবে বিপরীত পক্ষের কাছে যৌক্তিক তথ্যের আহবান জানানো উচিত। 'আপনার ঠিক কেন এমন মনে হলো', 'কিসের ভিত্তিতে আপনি এ মন্তব্য করছেন'-এভাবে সরাসরি অথচ কৌশলে তাদের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা উচিত।
গোলমালের ভেতর নিজের শ্রম ও শক্তি খরচের চাইতে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া না জানানোই বরং শক্তি প্রদর্শনের সর্বোত্তম উপায় হতে পারে।
সাইকোলজিকাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, কীবোর্ডে ঝড় তোলা কখনোই কারও মুখের ওপর সরাসরি প্রতিবাদ বা মতামত প্রকাশের মত কার্যকর নয়।
তাছাড়া মন্তব্যকারী ব্যক্তি যদি আপনার কাছের বা পরিচিত কেউ না হন, তাহলে তো সে কী বলল না বলল, তা একেবারেই আমলে নেয়ার দরকার নেই- এ পরামর্শ সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ উলাশ ডানলপের। তবে সে যদি সত্যিই ঘনিষ্ঠ কেউ হয়ে থাকে, তবে সবচেয়ে ভাল হবে তাকে ফোন করে নিজেদের ভেতর যোগাযোগের ঘাটতি মিটিয়ে নেয়া।
যেকোন ব্যাপারে অনলাইন মন্তব্যে সাড়া দেয়ার আগে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে পরিস্থিতিটি মূল্যায়নের পরামর্শ দেন ডানলপ। ওপাশের ব্যক্তিটির অভিপ্রায় সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ করা যায় তাহলে।
তিনি বলেন, "যখন দেখবেন কেউ আপনাকে সাইবার-বুলিং করছে, আপনাকে ভুল প্রমাণিত করে তার নিজের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, আপনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেতে চাইছে, তখন আপনি এর কোন উত্তরই দেবেন না। কিংবা স্রেফ ছোট্ট করে বলতে পারেন, 'আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ'। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যখন সমালোচনা করা হয়, তখন কিন্তু তারা এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকে'।