মহামারির দিনগুলোতেও কিছু আশার গল্প
দেখতে দেখতে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে ২০২০ সাল। আর একটিবার সূর্যাস্তের হলেই, আর মাত্র একটিবার ক্যান্ডারের পাতা উল্টালেই ২০২০ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন একটা বছরে প্রবেশ করবো আমরা অনেক নতুন আশাবাদ নিয়ে।
২০২০ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটা বছর, যখন যেদিকেই আপনি তাকান না কেন, চোখে পড়বে শুধু বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবানল, বন উজাড়, চারিদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বজন হারানোর শোক আর মহামারীতে বিপর্যস্ত মানুষের আহাজারি।
এ কথা বলা যেতেই পারে যে, ২০২০ সালের মতো একটা বছর মানুষ আর ফিরে চাইবে না জীবনে। কিন্তু আমরা কেবল একটা বিপর্যস্ত পৃথিবীর স্মৃতি নিয়েই এগোচ্ছি না ভবিষ্যতের দিকে, অনেক খারাপ ঘটনার মাঝেও ২০২০ সালে ঘটেছে বেশকিছু আশা জাগানিয়া ঘটনা, যেগুলো এই মহামারীর ভেতরেও একটা সুন্দর পৃথিবীর দিশা দেখিয়েছে আমাদের।
এক নজলে দেখে নেওয়া যাক তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার পটচেস্টরুমের সেনউইস পার্কে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে তিন উইকেটে পরাজিত করে বিশ্বকাপ ট্রফি জয় করে বাংলাদেশের যুবারা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই শক্তিশালী দল ভারতকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে প্রথবারের মতো শেরপা জয়ীর তালিকায় নিজেদের নাম অর্জন করে বাংলাদেশ।
পোলিও মুক্ত আফ্রিকা
নানান ধরণের মানবিক জটিলতায় আক্রান্ত আফ্রিকা ২০২০ সালে সুখবর বয়ে নিয়ে এসেছিল পৃথিবীর জন্য। গত ২৫ আগস্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ২০১৬ সাল থেকে আফ্রিকা মহাদেশে বন্য পোলিও ভাইরাসের নতুন কোনো সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি। মানে ২০২০ সাল থেকে আফ্রিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হলো বন্য পোলিও মুক্ত মহাদেশ।
বাংলাদেশে ১৯৭০ এবং ৮০'র দশকে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিও চালু হয়। ফতশ্রুতিতে ব্যাপকভাবে দেশের সকল স্তরের মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে আর কোন পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি, কিন্তু ভারতে সেটির অস্তিত্ব থাকার কারণে বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১৭ই মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে করোনা মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বজুড়ে নারীর নেতৃত্বের জয়জয়কার
এই বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে, এটি বিশ্বব্যাপী নারী নেতাদের জন্য একটি উজ্জ্বল মুহূর্ত ছিল।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের ২০২০ সালে প্রকাশিত বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায়, ৩৯তম স্থানে এসেছে শেখ হাসিনার নাম।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডেন করোনা ভাইরাস নির্মূলে এবং মহামারীর সময় বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশ হয়ে উঠতে নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব প্রদান করেন যার ফলশ্রুতিতে নিউজিল্যান্ডের পুনর্নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং ফিনল্যান্ডের সানা মারিনও করোনার ভেতর তাদের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য প্রশংসা অর্জন করেছেন।
ইতিহাসে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ
করোনা মহামারীর লকডাউনের ফলে মানুষ একপ্রকার গৃহবন্দী হয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালে বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণ কমেছে সাত শতাংশ। যা ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ কম নিঃসরণ। যদিও গৃহবন্দী থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিঃসন্দেহে কোনো ভালো উপায় নয়। কিন্তু করোনা পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে যদি আবার আমরা লাগাতার পরিবেশের জন্য বিপজ্জঙ্ক কার্বন উৎপাদনে ব্যস্ত থাকি তাহলে ২০২১ সালের মাঝেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর এই অর্জন নিমেষেই ফিকে হয়ে যাবে।
পরিষ্কার সমুদ্র পাচ্ছে পৃথিবী
বিশ্বের ৪০ শতাংশ উপকূলের অধিপতি ১৪টি দেশ একত্রিত হয়ে সমুদ্র পরিষ্কার করার বিশ্বের বৃহত্তম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । অন্য কথায়, আফ্রিকার আয়তনের সমান সমুদ্র সীমাকে এখন করা হচ্ছে প্লাস্টিকমুক্ত, যাতে মাছেদের বিচরণ ও প্রজননের জন্য তা পরিণত হতে পারে অভয়ারণ্যে। পাশাপাশি প্রবালপ্রাচীর পুনরুদ্ধারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগে।
ল্যাবে তৈরি বিকল্প মাংস
কিছু প্রাণীর জীবন বাঁচাতে আমরা সরব থাকলোও বেঁচে থাকার জন্য কিছু প্রাণীকে খেয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। ২০২০ সালে মানুষের এই অভ্যাসেও এসেছে কিছুটা নতুনত্ব। মানুষের চাদিহার মাংসের জোগান দেওয়া প্রাণীদের জন্যেও সুসংবাদ নিয়ে এসেছে ২০২০ সাল।
গবেষণাগারে তৈরি 'পরিষ্কার মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মাংস খাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। গবেষকরা মনে করছেন গুনগতমানের উৎকৃষ্ট পুষ্টিসম্পন্ন এই মাংসের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে সকল স্তরের মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে এই মাংসের দাম। ফলে একদিকে মানুষের মাংসের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, একই সাথে মাংসের চাহিদার জন্য অন্য কোনো প্রাণীকে আর হতে হবেনা মানুষের চাহিদার স্বীকার।
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার: ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন
প্রত্যেক বছরেই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও দানবাধে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে মানুষ নেমে আসে রাস্তায়, নানা ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং এরপর ঘরে ফিরে যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিসে চার পুলিশ সদস্যের বর্বরতায় নিহত নিরপরাধ জর্জ ফ্লয়েডের জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী বর্ণবাদ বিরোধী যেই গণজোয়ার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তার সাথে তুলনা হয়না অন্য কিছুর।
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার ঘটনা কেন্দ্র করে আমেরিকার ২৫টি অঙ্গরাজ্যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এবং দ্রুতই সেই বিক্ষোভ আন্দোলন রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘাত চলে টানা কয়েকদিন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প সরকার মাঠে নামায় পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীকে । বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্যেসহ ইউরোপের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পরে আন্দোলন।
আমেরিকার গণমাধ্যম'সহ সমগ্র পৃথিবীতে গণমাধ্যম এই আন্দোলনের সংবাদ বিক্ষোভের ভিডিওচিত্র প্রচার করে।
আমেরিকার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অগ্রগণ্য ব্যাক্তিত্ব বলে পরিচিত এমআইটি প্রফেসর নোয়াম চমস্কি, হার্বাট প্রফেসর ও কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের নেতা কর্নেল ওয়েষ্টসহ বহু বুদ্ধিজীবী এই আন্দোলনে সংহতি জানান। অনেকেই এই আন্দোলনকে 'আমেরিকান স্প্রিং' হিসেবে চিহিৃত করেন।
এই আন্দোলনের রেশ এসে পৌঁছায় বাংলাদেশেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রতিষ্ঠিত নানান গণমাধ্যমে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়। এবং অনেক পৃথিবী জুড়ে ধিক্কারের মুখে পড়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বর্ণবাদী চিন্তা।
বিশ্ববাসীর আশার আলো করোনাভাইরাসের টিকা:
মহামারি করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখন আশার আলো হিসেবে ৯ নভেম্বর আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবনে তাদের সাফল্য ঘোষণা করে। তারা জানায়, তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করোনা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর।
ডিসেম্বরের শুরুতে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্যে এবং শুরু হয় তাদের টিকাদান কার্যক্রম।
আশা করা যাচ্ছে ২০২১ সালের প্রথমদিকেই বাংলাদেশেও শুরু হবে টিকাদান কার্যক্রম।
সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন
বাংলাদেশের ক্রিকেট আর সাকিব আল হাসান যেন একে অপরের পরিপূরক। সেই সাকিব আল হাসান'ও ছিলেন টানা এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসি বা বিসিবিকে না জানানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দু'বছরের জন্যে আইসিসি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। সাকিব পরবর্তীতে ভুল স্বীকার করে তদন্তে সাহায্য করায় তা কমিয়ে ১ বছর করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রায় ১৩ মাস পর গত ২৪ নভেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেমকন খুলনার হয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে প্রত্যাবর্তন করেন সাকিব আল হাসান। যা বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য আনন্দের সংবাদ।
দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতু
গত ১০ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। এর মাঝে দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু।
এ বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি ২০ হাজার প্রকৌশলী, শ্রমিকদের মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম জড়িত।
দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।
অনেক অনিশ্চয়তার পর বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই শুরু হয়ে পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। চৌঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা। অনেকের মতেই বিশ্ব দরবারে পদ্মা সেতু চিহ্নিত হবে বাংলাদেশের স্বনির্ভরতার প্রতিক হিসেবে।
ট্রাম্পের পতন
২০২০ সালের শেষ দিকে বিশ্ববাসীর জন্য আরও একটি আনন্দের সংবাদ হচ্ছে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের পতন। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন'কে হারিয়ে হোয়াইট হাউজে আসন গ্রহণ করেন ডোনান্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসীন হবার পর থেকেই একের পর এক বর্ণবাদী, উগ্র ও উদ্ভট সিদ্ধাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র'সহ সারা বিশ্বের জন্যই অস্বস্তিকর প্রেক্ষাপট তৈরি করে এই রিপাবলিকান দলের এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একাধিকবার তিনি উদ্ধত হন ইরান ও উত্তর কোয়িয়ার সাথে পারমাণবিক যুদ্ধে লিপ্ত হতে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্যনীতি করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সর্বাধিক মানুষের অসহায় মৃত্যুর জন্য অন্যতম কারণ। করোনার লকডাউনের সময় তিনি একাধিকবার করোনাকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুশাসন অস্বীকার করেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি নিজেই করোনায় আক্রাক্ত হন।
ট্রাম্প প্রশাসনের উপর মার্কিন জনগণের যথেষ্ট ক্ষোভের জায়গা ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের অন্ধ অনুসারীর সংখ্যাও নিতান্তই কম ছিল না। অবশেষে ট্রাম্প প্রশাসনের কফিনে শেষ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পেরেক হয়ে বিঁধে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার'।
৪ শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্ণবাদী বর্বরতার শিকার হয়ে নির্মম ভাবে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড। তার হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে লাখো মানুষ পথে নেমে এলে আন্দোলন শক্ত হাতে দমন করার পাঁয়তারা শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। পুলিশ ছাড়াও পথে ময়াতেন করা হয় কয়েকটি বিশেষ বাইনির সদস্যদের।
বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনকারী'দের শুরু হয় কয়েকদিনব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ। যার ফলে জনমনে আরও ঘৃণা তৈরি হয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি। ফলশ্রুতিতে, গত ৩রা নভেম্বর ৫৯ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের বিপরীতে ২৩২ ইলেকট্ররাল ভোট ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে প্রয়োজন হয় ২৭০ ইলেকট্ররাল ভোটের। অপরদিকে ৩০৬ ইলেকট্ররাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয় জো বাইডেন। যদিও এই নির্বাচনেও ডোনাল্ড ট্রাম্প সাত কোটির বেশি ভোট পেয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। তবু শেষ রক্ষা হয়নি বর্ণবাদের দায়ে অভিযুক্ত এই প্রেসিডেন্টের। কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৮ কোটি ১৩ লক্ষ ভোট পেয়ে।
তো, ভেবে দেখা যাক এবার, এই দুর্দশাপূর্ণ মাঝেও ২০২০ সাল আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য দারুণ কিছু আশাবাদ রেখে যাচ্ছে কিনা।