সকালের ভারী নাস্তা কমিয়ে দেয় খাওয়ার রুচি: গবেষণা
সকালে ভারী খাবার খেয়ে রাতে কম খাওয়ার অভ্যাস করলে ক্ষুধা কম লাগবে, আর সেই সঙ্গে কমবে ওজনও।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিনের গবেষক দল ভারী ব্রেকফাস্ট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে ভারী ডিনার করা ব্যক্তিদের মধ্যে তুলনা করে এই ফলাফল দেখেন।
তবে দিনের কোন বেলায় ভারী খাবার খাওয়া হচ্ছে তা ক্যালরির হিসাবে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। আসলে যারা সকালে ভারী খাবার খান তাদের খাওয়ার রুচি অন্যদের তুলনায় অনেক কমে যায়। ফলে সারাদিন তারা তেমন ক্ষুধাবোধ করেন না।
গবেষকরা 'ক্রোনো-নিউট্রিশন' অর্থাৎ আমাদের অভ্যন্তরীণ দেহঘড়ি আমাদের খাদ্যাভাস ও পরিপাক ব্যবস্থায় কীধরনের প্রভাব ফেলে তাই দেখতে চেয়েছিলেন।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারে মোট ১,৭০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন।
প্রথম মাসে তারা মোট ক্যালরির অর্ধেক সকালের নাস্তায় এবং বাকি অর্ধেক ক্যালোরি দুপুরে ও রাতের খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করেন।
পরের মাসেও স্বেচ্ছাসেবকরা সেই ১,৭০০ ক্যালোরিই গ্রহণ করেন। তবে সকালের পরিবর্তে ভারী খাবারগুলো রাতে খান তারা।
বিভিন্ন সময় অংশগ্রহণকারীদের মেটাবলিজম হারও পরীক্ষা করা হয়।
সেল মেটাবলিজম সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাটির তথ্যানুসারে, কোন সময় খাবার খাওয়া হলো, তা কত ক্যালোরি খরচ হচ্ছে সেই হিসাবে তেমন কোনো প্রভাব রাখে না। কিংবা বিশ্রামের সময় তাদের মেটাবলিজম হার কত বা তারা কত ওজন ক্ষয় করছে সেক্ষেত্রেও তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না এই পার্থক্য।
মূল পার্থক্যের দেখা মিলে আসলে খাবারের রুচি ও ক্ষুধাবোধ নিয়ে। ভারী ব্রেকফাস্টে রুচি কমে যায়।
গবেষক আলেকজাদ্রা জোনস্টোন বলেন, 'সকালে ভারী ও স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট গ্রহণের মাধ্যমে শরীর সতেজ ও সক্রিয় থাকবে। একইসঙ্গে বাকি দিনের খাবারের প্রতি লোভও সামলানো যাবে।'
তিনি বলেন, বিশ্বে খাদ্যজনিত ঘাটতি বা এমন সমস্যা দেখা দিলে এই গবেষণার ফল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।
তবে সকালের ভারী নাস্তা কেন ক্ষুধা কমায় তা স্পষ্ট নয়। জোনস্টোনের মতে মস্তিষ্কের রুচি ও রিওয়ার্ড ব্যবস্থা দিনের প্রথম খাবারের জন্য বেশিমাত্রায় উদ্দীপ্ত থাকে এমনটা মনে করা হয়। কারণ সারারাত অভুক্ত থাকার পর মানুষ সকালের খাবারের মধ্য দিয়ে এক দীর্ঘ সময়ের উপবাস ভাঙে।
তবে বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস এর ঠিক বিপরীত।
মানুষ সকালে আরেকটু বেশি ঘুমাতে ভালোবাসে। আর তাই সকালে ওঠে ভারী খাবারের আয়োজন করার মতো অবস্থায় থাকে না। তাই ভারী খাবার সন্ধ্যার দিকেই বেশি খাওয়া হয়ে থাকে।
তবে যারা রাতের শিফটে কাজ করেন এবং মধ্যরাতে খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে কী ঘটে, গবেষকরা এখন তা নির্ধারণের চেষ্টা করছেন। যারা সকালে উঠতে ভালোবাসে তাদের বিপরীতে যারা রাত জাগতে ভালোবাসে তাদের কার জন্য কোন ধরনের ক্রনো-নিউট্রিশন বেশি ভালো হবে সেটাই দেখছেন তারা।
অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটির একজন ডায়েটিশিয়ান ডা. ডুয়েন মেলর বলেন, 'আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে থাকলে সকালে ভারি খাবার খান। তেমনই দুপুরের পর জাগার অভ্যাস থাকলে তখন উঠে ভারি খাবার খান। ঘুমের সময় যত এগিয়ে আসবে খাওয়া কমিয়ে দিন। সেটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে'।
- সূত্র: বিবিসি