কিন্ডলের ১৫ বছর: অত্যাধুনিক স্মার্টফোন-ট্যাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কীভাবে টিকে আছে এই বুক রিডার?
আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর বাজারে ই-বুক রিডার কিন্ডল নিয়ে আসে আমাজন। সেই সঙ্গে শুরু হয় বই পড়ার এক নতুন যুগের সূচনা। বই প্রকাশনা শিল্প রাতারাতি বদলে যায়। ডিজিটাল বই জগতে নতুন করে সাড়া ফেলে বেজোসের জায়ান্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন।
এই ১৫ বছরে প্রযুক্তি আরও বহুদূর এগিয়ে গেছে। অত্যাধুনিক স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এসেছে বাজারে। ই-বই পাঠকদের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু কিন্ডলের ই-ইঙ্ক ডিসপ্লেকে এখন পর্যন্ত কোনো এলসিডি ডিসপ্লেই পেছনে ফেলতে পারেনি। বই পড়ুয়ারা এখনও বইয়ের স্বাদ পেতে কিন্ডলের ওপরই ভরসা রাখেন। এতে যেমন বইয়ের পাতার মতোই লেখাগুলো দেখা যায়, তেমনই চোখের ওপরেও চাপ কম পড়ে।
চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকেও আইপড বা রেকর্ডারের মতো ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ছিল যেগুলো দিয়ে শুধুমাত্র কোনো একটি কাজই বিশেষভাবে করা যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে স্মার্টফোনেই সব উন্নতমানের সুবিধাদি যুক্ত হতে শুরু করে। গান শোনা, টিভি দেখা সবই এক ফোন বা ট্যাবে। বইও পড়া যায় ফোনে। কিন্তু তারপরও কিন্ডলের জায়গা নিতে পারেনি ফোন বা ট্যাব।
এছাড়া এই ডিভাইসগুলোর নিত্যনতুন সংস্করণ প্রতিনিয়ত আসছে। নতুন কোনো প্রযুক্তি আসলে পুরোনোটা আর ধোপে টিকছে না। এরকম একটি সময়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কিন্ডলের টিকে থাকা সত্যিই আশ্চর্যের।
এবিআই রিসার্চ ফার্মের রিসার্চ ডিরেক্টর ডেভিড ম্যাককুইনের মতে, 'কোনো ডিভাইস যা কেবল বিশেষ একটি কাজের জন্যই ব্যবহার করা যায়, তার টিকে থাকার একমাত্র কারণ হলো সে ওই একটি কাজই খুব ভালোমতো করে।'
শুরুর দিনগুলোতে কিন্ডলের নাম ছিল ফিয়োনা। বাজারে যখন ই-বুক পড়ার তেমন কোনো হার্ডওয়্যার ছিল না, তখন কিন্ডল সবচেয়ে সেরা পণ্যটা নিয়েই হাজির হয়। প্রথমদিন বাজারে ছাড়ার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায়।
কিন্ডলের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক চিঠিতে বেজোস লিখেন, 'উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সাপ্লাই চেইন ও ম্যানুফেকচারিং দলকে তাড়াহুড়ো করতে হয়েছিল'।
'আমরা জানতাম কিন্ডলকে একটি সাধারণ ছাপা বইয়ের মতোই হতে হবে যেন পাঠকরা একবার বইয়ে মনোনিবেশ করলে ভুলে যায় যে তারা কোনো ডিভাইসে লেখা পড়ছে। আমরা মেনে নিয়েছিলাম বইয়ের সব বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করলেও আসল বইকে কখনোই টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয়'।
বেজোস তাই হুবহু কোনো বইকে অনুকরণ না করে এর মধ্যে কিছু নতুনত্বও এনে ছিলেন। যেমন বড় স্ক্রিন, টাচস্ক্রিন, ফন্ট সাইজ ও স্পেসিং বড় করার সুবিধা। আরও ভালো প্রসেসর ও ব্যাটারি ব্যবহার ইত্যাদি।
ইলুমিনশনের দিকে বিশেষ খেয়াল রেখে কিন্ডল আনে কিন্ডল পেপারহোয়াইট, পানি নিরোধক কিন্ডল ওয়েসিস, বাচ্চাদের কিডস এডিশন এবং সর্বশেষ ই-পেন দিয়ে লেখার জন্য কিন্ডল স্ক্রাইব।
ডিভাইজের অন্য বেশকিছু ফিচারও পরির্তিত হয়েছে। যেমন শুরুর দিকে একে প্রতিদিন চার্জ দিতে হতো। অন্যদিকে ইন্টারনাল স্টোরেজ ছিল মাত্র ২৫০ মেগাবাইট, যাতে ২০০ মাঝারি আকৃতির বই ধরত। কিন্তু এখন এর ব্যাটারি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। শুরুর দিকে মাত্র ৯০ হাজার বই থেকে বর্তমানে কিন্ডলের কাছে ১৩ মিলিয়ন বই আছে স্টোরে। শুরুতে খরচ পড়ব ৩৯৯ ডলার, অথচ এখন মাত্র ৯৯ ডলার থেকেই তা শুরু।
গঠনগত দিক থেকে নতুন সংস্করণগুলো উন্নতমানের হলেও কিন্ডল এখনও ১৫ বছর আগের মতোই বই পড়ার সুখ দিবে। এর এই টিকে থাকার কারণ পুরোটাই কৌশলগত বলেও মত বিশ্লেষকদের।
- সূত্র: সিএনএন