আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান উন্নয়ন করতে চায় সরকার
আধুনিকায়নের অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেবে সরকার, যা কার্গো পরিচালনায় আরও উন্নত সুবিধা যোগ করবে। পাশাপাশি বন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তাগুলি উন্নয়নের কথা রয়েছে এবং সেখানে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমন কথা জানিয়ে বলেছেন, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে বিশ্বের ১০০টি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৫৮তম থেকে ৩০তম'তে উন্নীত করতে আমরা কাজ করছি। দেশের অর্থনীতির 'লাইফ লাইন' খ্যাত এ বন্দর মহামারির এই দু:সময়ে শতভাগ সচল থেকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে।
আজ রোববার (২০ ডিসেম্বর) বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪তম উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো উন্নয়নে উদ্যোগ নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বন্দরে চাকরীর ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে অদক্ষ লোককে বন্দরের কোন দায়িত্ব দিতে চাইনা।
কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পে অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্দর চালু রাখতে হলে ড্রেজিং করতে হবে। ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পে রিভাইজ ডিপিপি করা হচ্ছে। ড্রেজিং এর জন্য ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ চলছে। বে টার্মিনাল প্রকল্পে অনেক বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখিয়েছে। সমঝোতা হলেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
এর আগে সকাল ১১ টায় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে। বর্তমানে দেশের মানুষ গর্ব করে বলে 'নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে। এছাড়া, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন সহ বেশ কিছু মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক উন্নয়নে আপনাদের লিখনী, সংবাদ পরিবেশন আমাদের প্রেরণা, সাহস জুগিয়েছে। বাংলাদেশে একটা সময় ছিল নেতিবাচক সংবাদই বড় সংবাদ। এখন দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সংবাদ বেশি প্রচার হচ্ছে। এদেশের মানুষ নেতিবাচক সংবাদে বেশি দৃষ্টি দেয় না।
বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান আহছানুল হক চৌধুরী বলেন, সভায় চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হওয়া পণ্য দ্রুত নিলাম এবং ধ্বংসের ব্যবস্থা নেওয়া, বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো বা অফডক সরানো, অফডকের বিভিন্ন সেবার বিল কমানো, বন্দরের বিশেষায়িত হাসপাতালের উন্নয়নে আলোচনা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য কোন সিন্ধান্ত আসেনি উপদেষ্টা কমিটির সভায়।
বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম সভা সঞ্চালনা করেন। উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবুল কালাম আজাদ কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম আলতাফ হোসেন, নুরুল কাইয়ুম খান, বিজিএমইএর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন প্রমুখ।
পাশাপাশি জুম অ্যাপে সভায় অংশ নেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।