কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে ঢাকায় ফিরেছে যানজট
দেশব্যাপী করোনা রোধে চলমান সাতদিনের কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে লকডাউন। ঢাকার বেশ কিছু মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
চারদিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে ব্যাংক, পুঁজিবাজার, ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু হতে চলেছে। তবে, সরকারি নির্দেশনার কারণে সীমিত থাকবে লেনদেন।
গত চারদিনের তুলনায় আজ যানবাহন ও জনসমাগম বেশি দেখা গেছে।
সকালে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের চলাফেরা নজরে এসেছে।
প্রাইভেট কারসহ চলছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। বহু পথচারীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেও দেখা গেছে।
কাঁচামালের আমদানি-রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সারওয়ার আলম। কাফরুল থেকে হেঁটে হেঁটে যেতে হবে পল্টনের অফিস পর্যন্ত।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "লকডাউনে কাঁচামালে রপ্তানি প্রতিষ্ঠানে বন্ধ নেই। কিন্তু রাস্তায় বাস না থাকায় আমাকে হেঁটে যেতে হবে। রিকশায় কাফরুল থেকে পল্টন পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া চায়। অথচ আমাদের দৈনিক আয়ই এতো টাকা হয় না।"
সৌদি প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমান বিমানের টিকেট সংগ্রহের জন্য ফেনী থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, "ঢাকায় আসতে আমার ৭ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে পথে পথে ভোগান্তির শেষ নাই। সরকার একদিকে গণপরিবহন বন্ধ করে কঠোর লকডাউন দিয়েছে আর অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিমান ফ্লাইট চালু রেখে আমাদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।"
এছাড়া, রাস্তার ধারে আজ নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষ করে দিনমজুরদের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
মোতালেব হোসেন নামের একজন নির্মাণ শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "লকডাউনে কাজ বন্ধ হওয়ায় আমি সম্পূর্ণ বেকার, ঘরে খাবার নেই, তাই সকাল থেকে কাজের আশায় বসে আছি।"
তবে রাস্তায় গণপরিবহন বাস না থাকায় রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা। তবে, রাস্তায় আগের মতো যাত্রী না থাকায় রিকশা চালকরাও সেভাবে ভাড়া পাচ্ছেন না।
যাত্রী না পাওয়ায় অনেক রিকশা চালককে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
রিকশা চালক মোহাম্মদ সবুজের সাথে কথা হয় রাজধানীর শাহবাগে। কিছুটা মলিন মুখে তিনি যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি একজন কভার্ড ভ্যান চালক, করোনায় চাকরি হারিয়ে এখন রিক্সা চালাই। কিন্তু এখন লকডাউনেও তেমন যাত্রী নাই। সকাল চার ঘন্টায় মাত্র ৮০ টাকা আয় করেছি।"
এদিকে লকডাউনে রাজধানীর শপিংমল ও বড় মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব পালন করা নিয়ে তেমন সতর্কতা দেখা যায়নি ।
কারওয়ান বাজার মোড়, বাংলামোটর, শাহবাগ ইত্যাদি এলাকা ঘুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা নজরে আসেনি।
কয়েকটি জায়গায় চেকপোস্ট বাসিয়ে মাঝেমধ্যে চেক করতে দেখা গেছে।
রমনা জোনের ট্র্যাফিক সার্জেন্ট মোর্শেদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষের বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছি। তবে বেশির মানুষই অসততার পরিচয় দিচ্ছেন। অনেকেই জরুরি সেবাকার্যের ১৮ শ্রেণির অজুহাত দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।"
তিনি আরও বলেন, "যারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদেরকে আমরা মামলা -জরিমানা থেকে শুরু করে গ্রেফতার পর্যন্ত করছি। তবে তারপরও আইন না মেনে অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে।"