পিপিই সঙ্কট চরমে
পর্যাপ্ত পিপিই (প্রাইভেট প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) না থাকায় চিকিৎসকদের রেইন কোট কেনার পরামর্শ দিয়েছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সচেতনতার অংশ হিসেবে চিকিৎসক ও নার্সদের মাঝে হ্যান্ড গ্লাভস বিতরণ করা হয়েছে।
হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের শুধু হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করেছে। আমরা নিজেদের টাকায় মাস্ক কিনে পড়ছি। তবে পিপিই'র বাকি অংশ 'কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেকশন ড্রেস' না থাকায় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে রেইন কোট কেনা বাবদ টাকা দিয়েছে।
যদিও হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, তাদের কাছে পর্যাপ্ত পিপিই রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবী এখন বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে দেশে এই ভাইরাসে ৩৯জন আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে চিকিৎসকও রয়েছেন। এ ছাড়া মারা গেছেন চারজন। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোনো চিকিৎসক যেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হন সেজন্য তারা পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে দেশের কোনো জেলাতেই পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ করা হয়নি। ফলে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টরা।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
বগুড়া: করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহম্মাদ আলী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০০টি পিপিই। যদিও তারা পাঁচ হাজার পিসের চাহিদা জানিয়েছিল।
এ ছাড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, তারা পিপিই চেয়েছিলেন ১০ হাজার; পেয়েছেন মাত্র ২৭০টি। অন্যদিকে জেলার সকল উপজেলার জন্য ১৫০০ পিপিই চাওয়া হলেও পাওয়া গেছে মাত্র ৩০০টি।
ময়মনসিংহ: জেলায় পিপিই'র তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সিভিল সার্জন এবিএম মসিউল আলম জানিয়েছেন, জেলার ১১টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ছয় হাজার পিপিই'র চাহিদা পাঠিয়েছি; তবে পেয়েছি মাত্র ১৫০টি।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) হিবলুল বারী জানিয়েছেন, হাসপাতালের জন্য এক হাজার পিপিই'র চাহিদা দেওয়া হয়েছিল; পেয়েছি মাত্র ১২০টি।
খুলনা: খুলনায় পিপিই'র চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জেলার সদর ও উপজেলা হাসপাতালের জন্য ১০ হাজার পিপিই'র প্রয়োজন হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১০০টি।
বরিশাল: করোনা ভাইরাসের কারণে বরিশালের দুটি সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় আলাদা করে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ৩২০ সেট গ্লাভস, মাস্ক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭০ সেট ও সদর হাসপাতালে ১৫ সেট পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৯ উপজেলায় আইসোলেশন ইউনিটের জন্য ১৫ সেট করে পিপিই দেওয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের সতর্কতায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করা হয়েছে। বরিশাল জেলার জন্য ৩২০ সেট পিপিই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য দেওয়া হয়েছে ১০০টি পিপিই। এছাড়া সদর হাসপাতালের জন্য মাত্র ১৫০টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম জানিয়ে জেলার চিকিৎসকরা আরও পিপিই সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার: জেলায় প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার পিপিই'র চাহিদা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১০০টি; যা খুবই নিম্নমানের বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পিপিই পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্সসহ ১৭০০ জনবলের জন্য পাঁচ হাজার পিপিই'র চাহিদা জানানো হলেও পাওয়া গেছে খুবই অল্প পরিমাণের পিপিই। এছাড়া করোনা নির্নয়ের জন্য কোনো কিট দেওয়া হয়নি।
কুড়িগ্রাম: পিপিই আছে ২০০টি। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছিল আরও বেশি।
মাগুরা: পর্যাপ্ত পিপিই নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তা আসবে বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের।
নেত্রকোনা: জেলাব্যাপী মাত্র ১০০টি পিপিই সরবরাহ।
রংপুর: জেলা প্রশাসনের কাছে পিপিই আছে মাত্র ২৫০টি। জেলার চার উপজেলায় তা ভাগ করে দেওয়া হবে।
সিলেট: সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই এসে গেছে জানিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, এখন আর পিপিই'র সংকট নেই।
তবে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কায়সার খোকন বলেন, আমাদের কিছু সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তবে তা যথেষ্ঠ নয়। বাকিগুলো আমাদের নিজেদের ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
টাঙ্গাইল: প্রয়োজন দুই হাজার নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই)। তবে চিকিৎসকদের জন্য দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫০টি।