ফের ১৫ দিনের রিমান্ডে পাপিয়া দম্পতি
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার দুইজন মহানগর হাকিম পৃথক তিন মামলায় তাদের রিমান্ডে দেয়ার এ আদেশ দেন। এই দম্পতির বিরুদ্ধে জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে।
বুধবার পাপিয়াকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা, শেরেবাংলানগর থানার অস্ত্র ও মাদক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিন করে ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালায় সংস্থাটি। সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখা, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগে তিনটি মামলা করে র্যাব। বিমানবন্দর থানা ও শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা আলাদা তিনটি মামলার প্রত্যেকটিতে পাঁচ দিন করে গ্রেপ্তারকৃত প্রত্যেকের ১৫ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রতারণা, অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে শামীমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে যুব মহিলা লীগ।
পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছিল, সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকা সত্ত্বেও পাপিয়া ও তার স্বামী স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তি ও অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন। ফার্মগেটে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও দুটি দুই কোটি টাকা দামের প্লট, বিলাসবহুল ৪টি গাড়ি এবং বিএফডিসির সামনে কার এক্সচেঞ্জ নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে তাদের। কার এক্সচেঞ্জ শোরুমে পাপিয়ার এক কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। নরসিংদী শহরে কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে ও বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন আসামিরা।
র্যাব জানায়, গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার 'প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট' ভাড়া নিয়ে এই দম্পতিকে অবস্থান করতে দেখা যায়। সেখানে তারা ৫৯ দিনে মোট ৮১ লাখ, ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। এর বাইরে হোটেলের বার এককভাবে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা বিল দিতেন।
র্যাব বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে টাকার উৎস সম্পর্কে কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
প্রাথমিক তথ্যমতে, পাপিয়া দম্পতি পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তবে টাকার বিনিময়ে কারও কোনো সংযোগ দিতে পারেননি তারা। তাছাড়া নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন।