বায়ুদূষণ রোধে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী ৫ জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ
রাজধানীতে বায়ুদূষণ কমাতে ঢাকাসহ আশে-পাশের পাঁচ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ঢাকার পাশের চার জেলার মধ্যে রয়েছে- নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ। এসব এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে নীতিমালা প্রনয়ণে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বায়ুদূষণ রোধে পানি ছিটানো ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে জারি হওয়া রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা ও তৌফিক এনাম টিপু।
আগামী ৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে ফলোআপের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতের ৫ দফা নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার (রাস্তায় ও নির্মাণাধীন কাজের জায়গা) কাজ চলছে সেসব এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে এবং যেসব এলাকা ধুলোবালি প্রবণ, সেসব এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দুইবার পানি ছিটাতে দুই সিটির মেয়র ও নির্বাহীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যাদের কারণে বায়ুদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ আদালতের মহাপরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে গত ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
ওইদিন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, রুলে ঢাকা শহরের বায়ু দুষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং দুষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত।
মনজিল মোরসেদ আরও জানিয়েছিলেন, অন্তর্ববর্তীকালীন আদেশে ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার(রাস্তায় এবং নির্মাণাধীন কাজের জায়গা) কাজ চলছে সেসব এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১৫ দিনের মধ্যে আদালতের অন্তর্বতীকালীন এ আদেশ পালন করে এর দুই সপ্তাহের মধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিপ্তররের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ রিটের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীকেও তলব করেছিলেন আদালত।
হঠাৎ করে বায়ূ দূষণের মাত্রা, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং শীতকাল আসার আগে বায়ূ দূষণের মাত্রা বাড়ছে উল্লেখ করে ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ বায়ু দূষণ সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদন জমা দেয় হাইকোর্টে।
সে রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে ঢাকা শহরে বায়ূদূষণের মাত্রা দিল্লী (ভারত) ও চীনের একটা প্রদেশ থেকে অনেক বেশি।
এই দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকার দুই সিটি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।