সোনা মসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়ায় বেড়েছে রাজস্বও
করোনা ভাইরাসের কারণে আরোপকৃত লকডাউন তুলে নেওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভর্তি পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আসছে। ফলে বন্দর থেকে গত কয়েকবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। এছাড়া বন্দরের সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকারকরাও সহজে পণ্য খালাস করতে পারছেন। তাদের কোনো ধরনের হয়রানীর সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।
সোনা মসজিদ স্থল বন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২৪ কোটি দুই লাখ ৩৯ হাজার টাকা। যা গত কয়েকবছরের তুলনায় বেশি।
বলা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় ১৯৩ কোটি টাকা বেশি।
চলতি অর্থবছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৬ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। যা গত অর্থবছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩৭ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় ছিলো ২১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিলো ৩০১ কোটি টাকা।
আমদানিকারক পণ্যের মধ্যে পাথর, ভুট্টা, ভুষি, ফলমূল ও পিঁয়াজ, চাউল, গম, রাইস ব্যান, আদা, শুটকি মাছ উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পাথর। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ ট্রাক পাথর আমদানী হয় এই বন্দর দিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল ও মে মাসে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিলো। জুন মাসে আমদানি-রপ্তানি শুরু হলেও পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা বিধিনিষেধ থাকায় পুরোদমে তা চালু হয়নি। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকেই তা পুরোদমে শুরু হয়। নতুন অর্থবছরে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আয়ও বাড়ে। তবে জানুয়ারি মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। গত সাত মাস থেকে পর্যায়ক্রমে পণ্য আমদানি বাড়ছে এবং রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কারোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সোনামসজিদ বন্দরে প্রতিমাসেই রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের দাবি।
তারা দাবি করেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের তদারকি ও কঠোর নজরদারির ফলে বন্দরে রাজস্ব আদায় বাড়ছে। শুল্ক স্টেশনে সেবার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে সুযোগসন্ধানী একশ্রেণির আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সবসময় চেষ্টা করে আসছিলেন।
বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এছাড়া গত সাত মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ছাড়করণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কাস্টমসের সরকারি কমিশনার মমিনুল ইসলাম জানান, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে কিছু ব্যবসায়ীর মধ্যে রাজনৈতিক কোন্দল ও মতানৈক্য থাকায় পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে, যার প্রভাব অনেক সময় রাজস্ব বৃদ্ধির ওপর পড়ে থাকে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আউয়াল জানান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাজ হচ্ছে কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা। অর্থাৎ শুল্ক স্টেশন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে থাকে। এইজন্য কাস্টমসে থেকে লাইসেন্স পেতে হয়। যারা কাস্টমসের লাইসেন্স পায় তারাই শুধু অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। আরও ১০৪ জন সদস্য রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণ কাস্টমস থেকে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এইজন্য তারা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য না। একপক্ষ দীর্ঘদিন স্থল বন্দর দখল করে রেখেছিল। দীর্ঘ ১২ বছর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের একপক্ষ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন দেয়নি। ফলে আমদানিকারকরা নানা ধরনের হয়রানি ও অসুবিধার সম্মুখীন হতো। তাদের পণ্য খালাস করতে চাঁদা দিতে হতো। অনেক আমদানিকারক এইজন্য বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। তবে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আমদানিকারকদের এই আশ্বাস দিতে পেরেছি যে পণ্য আমদানিতে কাস্টমসের কর ছাড়া তাকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ কোথাও দিতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, তবে প্রতিবছর বন্দর মাসুল ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করায় অন্য বন্দরের চেয়ে এ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত সেবা ও ভারী যন্ত্রপাতি না থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে প্রাইভেট কোম্পানিকে অপারেট করার দায়িত্ব দেওয়ায় এ সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চার্জ কমানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।