সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেবে না রিক্রুটিং এজেন্টগুলো
দ্য রয়েল অ্যাম্বাসি অব সৌদি আরাবিয়া তথা সৌদি দূতাবাসের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার থেকে সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)।
গত ৭ অক্টোবর সৌদি দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ১৫ অক্টোবর থেকে রিক্রুটিং এজেন্টদের কাছ থেকে সরাসরি কোনো পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে না, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবগামী কর্মীদের পাসপোর্ট 'শাপলা সেন্টার' এর মাধ্যমে জমা নেওয়া হবে।
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দ্য রয়েল অ্যাম্বাসি অব সৌদি আরাবিয়া-এর পাসপোর্ট জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কেউ পাসপোর্ট জমা দেবেন না বলে জানিয়েছেন বায়রার সভাপতি মো. আবুল বাসার।
শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক জরুরি সভা শেষে একথা জানান তিনি। এতে বায়রার সকল সদস্য সম্মতি প্রদান করেন।
রিক্রুটিং এজেন্টরা জানান, প্রয়োজনে তারা বায়রার মাধ্যমে সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিবেন তবুও নির্ধারিত এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিতে চান না তারা।
মো. আবুল বাসার বলেন, "শাপলা সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে আবার আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। এখানে কারও না কারও কিছু উদ্দেশ্য আছে। তা নাহলে সৌদি অ্যাম্বাসির মাথায় এটা ঢুকতে পারে না।"
তিনি বলেন, "আমরা রবিবার থেকে সৌদিআরব দূতাবাসে কোনও পাসপোর্ট জমা দেবো না। যতদিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত বাতিল না করে, ততদিন আমরা পাসপোর্ট দেবো না। আমাদের কাছে থাকা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পাসপোর্ট জমা দেবো না।"
তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব না দিয়ে বায়রাকে এ দায়িত্ব দিতে পারতো উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, "যদি মানুষের জট সংক্রান্ত সমস্যা হয়, তাহলে আমাদের বায়রার উপর ছেড়ে দেন। আমরা আপনাদের পছন্দমতো জায়গায় নিজেদের খরচে জায়গা তৈরি করে আমাদের সদস্যদের জন্য কাজটি করতে চাই। এই প্রস্তাব আমরা দূতাবাসের কাউন্সিলরের কাছে দিয়েছি। তিনি কোনও জবাব দেননি।"
তিনি আরও বলেন, "সৌদি আরব শুধু বাংলাদেশ থেকে লোক নেয় না। ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকেও লোক নেয়। ভারতে এই একই নিয়ম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সব রিক্রুটিং মালিক একসঙ্গে হয়ে তাদের কাছ থেকেই পাসপোর্ট নিতে বাধ্য করেছিল। যদি ভারত পারে বাংলাদেশ কেন নয়।"
মো. আবুল বাসার বলেন, "যদি বায়রার কোনও সদস্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে, আমরা প্রমাণ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বায়রা সদস্য বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্টদের অভিযোগ, এই শাপলা সেন্টার হলো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের মতো সৌদি আরবের শ্রম বাজারেও 'সিন্ডিকেট তৈরির একটি অপচেষ্টা'। এমন হলে সৌদির শ্রমবাজারও ধ্বংস হয়ে যাবে।
তারা বলছে, এখন প্রত্যেকটি এজেন্সি কোনো প্রকার ফি ছাড়াই সরাসরি সৌদি দূতাবাসে কর্মীদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারে। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তা হলে বেসরকারি ফার্ম একটি ফি নেবে, তাতে অভিবাসন খরচ বেড়ে যাবে।
একটি এজেন্সির মালিক হাসানুর রহমান হাসান বলেন, "আমরা চাই শাপলা সেন্টারের নামে 'ড্রপবক্স' সিন্ডিকেট ভেঙে যাক। আমরা কোনোদিন ডিএমইটি তে লাইসেন্স করতে ফি জমা দিতে হয়নি। এখন বিভিন্ন খাতে টাকা দেওয়া লাগছে। ৫০ হাজার টাকা উৎসে কর দিতে হচ্ছে। যেটা আগে লাগতো না।"
নূরুল আমিন বাদশা নামে আরেক এজেন্সির প্রতিনিধি বলেন, "বায়রার কমিটির মধ্যেও অনেকে শাপলা সেন্টারে সম্পৃক্ত আছেন। যারা জড়িত আছেন তাদের পদত্যাগের দাবি করছি। সাথে সাথে এ ব্যবস্থা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।"
আনোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, "নিজের নাম না দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে এজেন্সি চালায় অনেকেই। যারা সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন। আবার তারাই শাপলা সেন্টারের নামে সিন্ডিকেট করে নিজেরাই সৌদির শ্রমবাজার নিষন্ত্রণ করেন।"
শাপলা সেন্টারের সঙ্গে বায়রার সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অভিযোগ উঠে সংগঠনটির সদস্যদের মধ্য থেকে। তবে তিনি তার অস্বীকার করেন।
নোমান চৌধুরী বলেন বলেন, "একটা সাদা কাগজে ২৫-২৬ টা নামের সাথে আমার নাম থাকলেই সেটির সাথে যে আমি জড়িত বিষয়টি এমন না। একটা সাদা কাগজে নাম দেখা মানেই কি আমরা সম্পৃক্ত? আমি কোনোকিছুর সাথে জড়িত না। আমি যদি জড়িত থাকি বা আমার পরিবারের কেউ জড়িত থাকে, আমি পদত্যাগ করব।"
বায়রার সভাপতি বলেন, "যদি এতে কমিটির কারোও সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাই কিংবা বায়রার অন্য কোনো সদস্য এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে প্রমাণ পাই, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করব। কমিটির কোনো সদস্য জড়িত থাকলে পদত্যাগ করে আপনাদের দরবারে হাজির করে দেব। যদি বায়রার স্বার্থ কেউ নষ্ট করতে চায়, তাকে ইসি কমিটি থেকে বাতিল করতে পারব।"
তিনি বলেন, "দেশের মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণে বায়রার সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো জানিয়েছি। সমস্যার সমাধান হলে আমরা পাসপোর্ট জমা দিবো।"
সভায় বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের সঞ্চালনায় বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির বড় গন্তব্য সৌদি আরব। দেশ থেকে পাঠানো কর্মীদের ৩২ শতাংশেরও বেশি কর্মী যায় এই দেশে। বাংলাদেশে মোট রেমিটেন্সের ২০ শতাংশের বেশি আসে ওই দেশটি থেকে। ২০২১ সালে মোট জনশক্তি রপ্তানির মধ্যে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জনই গেছেন সৌদি আরবে। অর্থাৎ ৭৪ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে।
বিএমইটিএর হিসাব মতে, ১৯৭৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি অভিবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করে। পোশাক খাতের পরে জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের জিডিপিতে অবদান রাখা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত।