স্ক্র্যাপ থেকে যেভাবে চলাচল উপযোগী হলো চট্টগ্রাম বন্দরের তিন কন্টেইনার জাহাজ
চট্টগ্রাম বন্দর-পানগাঁও রুটে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস, এমভি পানগাঁও সাকসেস এবং এমভি পানগাঁও ভিশন নামে ৩টি কন্টেইনার জাহাজ ক্রয় করেছিলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার ফেয়ার সি শিপিং থেকে কেনা জাহাজগুলো প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় চলাচল শুরু করে এই রুটে। লোকসানে পড়ে ২০১৫ সালে ৫ বছরের জন্য সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের কাছে ভাড়াও দিয়েছিলো বন্দর।
কিন্তু জাহাজগুলো পরিচালনায় কোনভাবেই সফল হচ্ছিল না বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট বন্দরের কাছে হস্তান্তর করে জাহাজগুলো। ২০১৭ সালের শেষদিকে জাহাজ তিনটির চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জাহাজ তিনটি ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় সেগুলো নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের আগস্টে জাহাজ তিনটি বিক্রয়ের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আইনি বাধা নেই এমন মতামতও দিয়েছিলেন বন্দরের আইন উপদেষ্টা।
জাহাজগুলো দীর্ঘ দিন পড়ে থাকায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু দেশীয় সী গ্লোরি শিপিং লিমিটেড জাহাজগুলো ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের ডেল্টা শিপইয়ার্ডে মেরামত করে চলাচল উপযোগী করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, জাহাজগুলোর বিষয়ে তিনটি ওপেন টেন্ডার হলেও উপযুক্ত দাম পাওয়া যাচ্ছিল না। জাহাজগুলো যাতে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয় এ বিষয়েও আলোচনা চলছিলো। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের প্রচেষ্টায় গত এপ্রিলে চতুর্থবারের মতো ওপেন টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থবারে এসে সফলতা পায় বন্দর।
চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে সর্বাধিক জাহাজ পরিচালনকারী সংস্থা সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সি বিয়ারবোর্ট চাটার্ড চুক্তির আওতায় জাহাজ তিনটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তা থেকে সরে এসে জাহাজ তিনটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিকে।
প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছে বন্দর। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় জাহাজ তিনটির সংস্কার এবং নিজস্ব লোকবল দিয়ে পরিচালনা করবে। প্রতিটি জাহাজের জন্য মাসিক সাড়ে ৭ লাখ টাকা বন্দরকে প্রদান করবে। সেই হিসেবে তিনটি জাহাজ থেকে বন্দর মাসে ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাবে।
ইতোমধ্যে দুটি জাহাজ চলাচল উপযোগী হয়ে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। আরো একটি জাহাজের মেরামত কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। আগামী ১ মাসের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু করবে জাহাজটি।
সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সি কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এপ্রিলে জাহাজগুলোর বিষয়ে টেন্ডার হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত জুলাইতে জাহাজ তিনটি টেকওভার করে সী গ্লোরি শিপিং। এরপর জাহাজগুলো মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি জাহাজ মেরামত করতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস জাহাজটি মেরামত শেষে গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে চলাচল শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জাহাজটি দুটো ট্রিপ দিয়েছে। একই রুটে এমভি পানগাঁও সাকসেস চলাচলের বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জাহাজটি বর্তমানে বহির্নোঙ্গর থেকে পাথর বোঝাই করেছে। এটি চট্টগ্রাম থেকে আশুগঞ্জে যাবে। বন্দরের অনুমতি পেলে চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটে চলাচল করবে।
এদিকে আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে এমভি পানগাঁও ভিশন জাহাজের মেরামত কাজ। তবে জাহাজটি নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সির। এটি চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে কন্টেইনার পরিবহন উপযোগী করে মেরামত করা হচ্ছে।
সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন জুয়েল টিবিএসকে বলেন, 'যেহেতু জাহাজগুলো বেশ কয়েকবছর চলাচল করেনি তাই এগুলো চলাচল উপযোগী করা যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিলো। জাহাজগুলো নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। চট্টগ্রাম-পাঁনগাও রুটে আমরা সবচেয়ে বেশি জাহাজ পরিচালনা করি। যেহেতু জাহাজগুলো দেশের বাইরে তৈরী তাই আমরা একটি চ্যালেঞ্জ নিই। আমরা হিসেব করে দেখেছি এগুলো মেরামত করে পুনরায় চলাচল উপযোগী করলে লাভজনক হয়ে উঠবে। আশা করছি আমরা সফল হবো।'
তিনি আরো বলেন, "চট্টগ্রাম-পাঁনগাও রুটে পণ্য পরিবহন আগের তুলনায় কিছু বেড়েছে। ফলে ওয়েটিং টাইম কমে আসছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এই রুট আরো জনপ্রিয় হবে।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, "বন্দরের তিনটি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে এটি খুবই ইতিবাচক সংবাদ। আশা করছি জাহাজগুলো পরিচালনায় আমরা এবার সফল হবো।"
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও টার্মিনালে পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে একটি নির্ধারিত জেটি রয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পানগাঁও টার্মিনালে ২৫ হাজার ৩৭০ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়।