এমআরটি-৫ সাউথে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৩০০০ কোটি টাকা
প্রকল্পের ব্যয় সংশোধনে ৬০০ মিলিয়ন ডলার খরচ কমলেও, এমআরটি-৫ (দক্ষিণ রুট) নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারের খরচ এর উত্তরের রুটের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি পড়বে।
টাকার মান কমার কারণে এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণ রুট) তৈরিতে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল লাইন-১-এর চেয়েও ৭৯ শতাংশ বেশি খরচ হবে।
এমআরটি লাইন-৫ (দক্ষিণ রুট)-এর প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় তিন হাজার ১৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ৩১.২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১-এর প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকায়।
গাবতলী থেকে আসাদগেট, পান্থপথ, হাতিরঝিল ও আফতাব নগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল নির্মাণ করতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন করেছে ৪.৯ বিলিয়ন ডলার বা ৫২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএমটিসিএল আয়োজিত এমআরটি লাইন-৫-এর (দক্ষিণ রুট) স্টেকহোল্ডারদের কর্মশালায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের এই তথ্য জানান কর্মকর্তারা।
তবে কর্মশালায় প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল ওহাব দাবি করেন, ডলারে বর্তমান দাম, রেট শিডিউল এবং রড, সিমেন্ট ও পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
বাড়তি ৩০০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হলো
অনুষ্ঠানে এমআরটি-৫ নির্মাণে সহঅর্থায়ন এড়াতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর কাছে আগের প্রতিশ্রুত ২.৫ বিলিয়ন ডলারের সঙ্গে বাড়তি ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছেন। কারণ সংশোধনের পর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় কমে গেছে।
এ কর্মকর্তা বলেন, পরামর্শদাতারা প্রথম খসড়ায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন করেছিল।
চাহিদার চেয়ে এডিবির প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ অনেক কম হওয়ায় ডিএমটিসিএল, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সহ-অর্থায়নকারী খুঁজতে শুরু করেছিল।
সংশোধিত খসড়ায় প্রাক্কলিত ব্যয় ৬০০ মিলিয়ন ডলার কমেছে। ফলে দাতা সংস্থাটি থেকে এখন মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, কারণ বাকি ২.১ বিলিয়ন ডলার সরকার দেবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সহ-অর্থায়ন ব্যবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন ঋণদাতার দেওয়া আলাদা আলাদা নির্দেশনা মেনে চলতে হয় বলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীও এডিবিকে বাড়তি ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন চালু হলে প্রতিদিন ৫০ লাখের বেশি মানুষ এর সুবিধা পাবে।
আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, 'এর ফলে যানজট কমে আসবে। দ্রুত যাতায়াতের সুবাদে লোকজন পরিবার ও অফিসে বেশি সময় দিতে পারবেন। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।'
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং বায়ু, ধূলি ও শব্দ দূষণ হ্রাসের মাধ্যমে পরিবেশগত ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিবেশগত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কমপ্লায়েন্সের ওপর জোর দেন।
এছাড়া তিনি সামাজিক সুরক্ষা নীতি ও লিঙ্গ নীতি মেনে চলারও আহ্বান করেন।
অনুষ্ঠানে জিয়াংবো নিং, প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ, পরামর্শক ও মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্য প্রকল্পের খরচ কম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ উদ্বোধন করেন, যার মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট)-এর আওতায় ২০ কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩.৫ কিলোমিটার হবে ভূগর্ভস্থ।
প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৬২ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওহাব বলেন, এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট)-এর খরচ ঠিক করা হয়েছিল ২০১৮ সালের শিডিউল অভ রেট অনুসারে। আর নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভিত্তি হলো ২০২২ সালের শিডিউল অভ রেট, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের নভেম্বরের মুদ্রার বিনিময় হার বিবেচনা করে নতুন প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। গত নভেম্বর মাসে প্রতি ডলারের দাম আগের ৮৪ টাকার চেয়ে বেড়ে ১০২ টাকা হয়েছিল।
আব্দুল ওহাব আরও বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যার ফলেও বেড়ে গেছে প্রকল্পের ব্যয়।
অনুষ্ঠানে সিদ্দিক বলেন, ডিএমটিসিএল গাবতলী এলাকায় একটি ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) হাব এবং দাশেরকান্দি এলাকায় আরেকটি পানিভিত্তিক টিওডি গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করছে।
দেশের প্রথম পানিভিত্তিক টিওডি রাজস্ব বাড়াবে, যা মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয় মেটাতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, ডিএমটিসিএলের 'টাইম বাউন্ড' কর্মপরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে লাইনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেবা চালুর পর প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ যাত্রী এ লাইন ব্যবহার করবেন।
প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল ওহাব জানান, গত বছর প্রকল্পের প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ হয়েছে এবং আগামী মার্চের মধ্যে পরামর্শকরা বিস্তারিত নকশার প্রতিবেদন জমা দেবে।
গাবতলী থেকে আফতাব নগর পর্যন্ত ১২.৮ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল এবং আফতাবনগর থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ আগামী বছরের মধ্যে শুরু হবে। মোট ১৫টি স্টেশনের মধ্যে ১১টি হবে ভূগর্ভস্থ।