ওষুধের খসড়া আইন থেকে কসমেটিকসকে বাদ দেয়ার আহবান ব্যবসায়ীদের
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে এই আইন প্রণয়নে কসমেটিক ব্যবসায়ী ও বিএসটিআইএ'র সঙ্গে কথা না বলার অভিযোগ উঠেছে।
এ আইন বাস্তবায়িত হলে কসমেটিক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কসমেটিকসের দাম বাড়বে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাই ওষুধ আইন থেকে কসমেটিকসকে বাদ দেয়ার জন্য জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে এফবিসিসিআই নেতারা।
রোববার এফবিসিসিআই অডিটরিয়ামে আয়োজিত "প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা" বিষয়ক সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা এ আহবান জানান।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, "ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে, আইনটি ইতিমধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ওষুধ ও কসমেটিক দুটি পণ্যই ভোক্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আরেকটি ব্যবহৃত হয় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। তবে ভেজাল কসমেটিকস ব্যবহারে ক্ষতি হতে পারে। তাই দুটি বিষয়ের জন্যই সময়োপযোগী পৃথক আইন প্রয়োজন।"
তিনি বলেন, "উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যায় পর্যন্ত ভিন্ন হওয়ায় ওষুধ ও কসমেটিক একই আইনের আওতায় এনে ওষুধের কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশংকা করছে। আইনটি সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। স্টেকহোল্ডার হিসেবে এফবিসিসিআই মতামত দেয়ার সুযোগ পায়নি। যদিও এখন অনেক দেরি হয়েছে, আইনটি এখন সংসদে গেছে। তাও আমরা চাই ব্যবসার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের কথা শুনলে আইনটি আরো জনবান্ধব হবে। আমরা চাই আইনটি যাতে ব্যবসাবান্ধব হয়।"
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় মিল্লাত কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহফুজ জামান বলেন, "বিশ্বব্যাপী ওষুধ ও কসমেটিক আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত। কসমেটিকসের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে ওষুধের মত লাইসেন্স নেয়াটা ব্যবসা বন্ধের সামিল। কসমেটিকসের মূল্য বা বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের বিধান নেই। খসড়া আইনে মূল নির্ধারণের বিষয়টি বলা হয়েছে। কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে কসমেটিকের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এমন অবস্থায় খসড়া আইন পাশ হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ওষুধ আইনে কসমেটিকের অংশ বাদ দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।"
প্যানেল আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আকতার বলেন, "আমরাও আইনের মধ্যে থাকতে চাই ৷ তবে আইন যেন ব্যবসাবান্ধব হয়।"
ব্যবসায়ীরা বলেন, ওষুধ আইনের আওতায় কসমেটিক থাকলে বিষয়েটি জটিল রূপ নেবে। পৃথক কসমেটিক আইন করার আহবান জানান তারা।
বিএসটিআই'র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন বলেন, "কসমেটিকস পণ্যের মান প্রণয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, আমদানি-রপ্তানি বিক্রয় এবং এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধের ক্ষমতা বিএসটিআই'র ওপর ন্যস্ত। কিন্তু নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে এই কাজগুলো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। নতুন আইন পাশ হলে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের দ্বৈততা সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিএসটিআইতে মান প্রণয়ন, পরীক্ষা, পরিদর্শনের জন্য উচ্চশিক্ষিত, দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনবল আছে। বিএসটিআই এর চলমান কার্যক্রম অন্য সংস্থাকে ন্যস্ত করলে একদিকে বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরিগুলো ও জনবল অকার্যকর হবে, অন্যদিকে ল্যাবগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হারাবে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে।"
বিএসটিআই মহাপরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, "বিএসটিআই একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এটি মান প্রণয়ন, পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা ওষুধ নিয়ে কখনো ভাবিনি। আমাদের ভাবনার ও কর্মক্ষেত্রের এরিয়া কসমেটিকস। সঠিক পরিমাণের ও সঠিক মানের পণ্য মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে কাজ করছি আমরা। ফোর্থ জেনারেশনের টেস্টিং ল্যাব নিয়ে বসে আছি সারাদেশে। এর ক্ষমতা যখন আমার হাতে থাকবেনা তখন আমাদের এক্সপারটাইজ এবং অবকাঠামো নষ্ট হবে।"
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, "ওষুধ আইনটি অসাধারণ হয়েছে। কসমেটিকসের বিষয়টি আরো বিবেচনা করলে ভালো হয়। বিএসটিআই ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর দুটোই সরকারি প্রতিষ্ঠান তাই তাদের কাজের বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে হবে।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "কসমেটিকস মানুষের শরীরে, মুখে লাগানো হয়। কসমেটিকসে যদি কার্সেনোজেনিক সাবস্ট্যান্সেস থাকে, তাহলে মানুষের ক্ষতি হয়। যে সমস্ত কারণে মানুষের ক্ষতি হয় তা আমরা দেখবো। সামনে যে পার্লামেন্টারি কমিটির মিটিং হবে, তাতে কসমেটিকস প্রতিনিধিদের ডাকার কথা বলবো আমি।"