মশার প্রজনন মৌসুমের শুরুতেই দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড
এ বছর মশার প্রজনন মৌসুম শুরু হতে না হতেই গতকাল শনিবার (১৭ জুন) দেশে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৭ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) বুলেটিন অনুযায়ী, নতুন ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪০২ জন ঢাকার এবং বাকি ৭৫ জন রাজধানীর বাইরের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৩ জন। এরমধ্যে কেবল জুনের প্রথম ১৭ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যা এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর ৬১ শতাংশ। চলতি জুনে মাত্র ৬ দিন ডেঙ্গুজনিত কোনো মৃত্যু হয়নি বলে জানা গেছে।
এছাড়া, এ মাসে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২,৫৮১; যা চলতি বছরের মোট আক্রান্তের প্রায় ৫৬ শতাংশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যেভাবে ডেঙ্গু জেঁকে বসেছে আগামী আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনাই বেশি।"
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনসহ নগরবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেইসঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের ঘরবাড়ি মশামুক্ত করারও পরামর্শ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ।
দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ লাখ ১ হাজার রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০১৯ সালের পুরো জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১,৮৮৪ জন এবং সে মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৬ জনের।
অপরদিকে, দেশে ডেঙ্গুতে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয় ২০২২ সালে। গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২৮১ জন। একই বছর জুনে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল মাত্র ১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছিল ৭৩৭ জন।
এখনই যদি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০১৯ সালের থেকেও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার।
তিনি বলেন, "ডেঙ্গু সংক্রমণ কোরবানি ঈদে ছড়ানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কোরবানি ঈদের পরে শুধু ঢাকাতেই নয় ৬৪ জেলাতেই এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এরই মধ্যে দেশের ৪৫টি জেলাতে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম।
এ বছর ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের; ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে এবং বরিশালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১টি জেলায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগের ৫টি, ময়মনসিংহের ৩টি, খুলনার ৮টি, রাজশাহীর ৪টি, রংপুরের ২টি এবং সিলেট বিভাগের ১টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১,১৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন; এরমধ্যে ঢাকায় নিচ্ছেন ৯১১ জন।
এ বছর এখন পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৪,৬০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; গত বছরের একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র ৬৯০ জন রোগী।