চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি: কোভিড ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত চমেকের
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের ১৩ দিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৭৮ জন; এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ইতোমধ্যেই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করার বিষয়ে অবহিত করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ৫টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে– মেডিসিনের ১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড।
এরমাঝে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার করে (এক পাশে রাখার ব্যবস্থা) আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডেও এক পাশে রেখে রোগীদের চিকিৎসার কথা বলছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। তবে একপাশে হলেও একই ওয়ার্ডের ভেতর হওয়ায় সাধারণ রোগীরাও থাকছেন পাশাপাশি। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক মশারির ভেতর থাকার কথা বলা হলেও তারা মশারির ভেতর থাকতে চাননা। এতে করে সাধারণ রোগীরাও ঝুঁকিতে আছেন।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, "চমেকের কোভিড ইউনিটে বর্তমানে হাতে গোনা মাত্র ২/১ জন করে রোগী ভর্তি থাকছে। সেক্ষেত্রে এসব কোভিড রোগী আগের মতো চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা যায়। এতে করে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটটি খালি হলে সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে।"
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, "যেহেতু বর্তমানে কোভিড রোগীর সংখ্যা কম, তাই তাদের জেনারেল হাসপাতালে রাখা যায়। তবে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন কোভিড রোগীর চিকিৎসা সুবিধা আমাদের এখানে নেই, যা চমেক হাসপাতালে রয়েছে। তাই জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে যাতে চমেক হাসপাতালেও শিফট করা যায় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।"
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,২১৩ জনে।
আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এরমধ্যে ৭ জনই শিশু। চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৮৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরমধ্যে চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৬২ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ জন। এছাড়া, অন্যান্য হাসপাতালে আরো ২০৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি আরও ৪৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে অন্তত ৪৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১৮৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর তালিকা পাঠায়নি। শনিবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সমন্বয় করা হবে।
নতুন আক্রান্তসহ এ বছর ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ১৭,৮৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে ১১,৯৪১ জন ঢাকায় এবং ৫,৮৯০ জন রোগী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায়।
ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চুয়াডাঙ্গা ছাড়া দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রায় ৪,২২০ জন ডেঙ্গু রোগী এখনও সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে; আর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে মোট ১৩,৫১৮ জন রোগী।