চট্টগ্রামে ডেঙ্গু: জুলাইয়ের ২০ দিনে ৫ শিশুসহ ১২ জনের মৃত্যু
গত ১৫ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) ভর্তি হয় ১০ মাসের শিশু রাজশ্রী। তারপর থেকে সেখানকার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল সে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুইদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সোমবার ভোরে মারা যায় শিশুটি।
১৭ জুলাই রাজশ্রীর বাবা রাজীব ধরকে তার ছোট্ট রাজকন্যার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
চলতি মাসের ২০ দিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এরমধ্যে ৫ জন শিশু। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মুক্তা আখতার (২৫) নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২১ জন। যেকোনো সময়ের চাইতে এই সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১,৭৮০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। জুলাই মাসের ২০ দিনে সর্বোচ্চ ১,৩১৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এই সময়ে মারা গেছেন ২১ জন; যার মধ্যে ১০ জনই শিশু।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শিশুদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আক্রান্ত হলে ১১ বছরের নিচের শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে।"
চমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. রাজীব পালিত বলেন, "হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন। নতুন রোগী আসছেন ১০ থেকে ১৫ জন। মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কষ্টকর হয়ে উঠছে। আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি ডেডিকেট ইউনিট করার কথা ভাবছি।"
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, "জ্বর কমার পর ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা সময়কাল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের অনেকের শরীরে লিভারে পানি জমা, রক্তচাপ কমে যাওয়া ও কিডনি কাজ না করাসহ বেশকিছু জটিলতা দেখা দেয়।"
"রোগীদের এই সময়ে ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
নগরে ডেঙ্গু বিপজ্জনক আকার ধারণ করলেও এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু প্রতিরোধের যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন নগরবাসী ও বিশেষজ্ঞগণ।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, "মশার লার্ভা ধ্বংসে চসিক এবং স্বাস্থ্য বিভাগ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অপর্যাপ্ত এবং এর বড় প্রমাণ চট্টগ্রামের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি।"
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, "সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও। হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বাইরেও অনেক ডেঙ্গু রোগী বাড়িতে এবং ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ফলে সরকারি এই হিসাবের বাইরেও আরও অনেক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন।'
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর দাবি, মশার প্রজনন স্থানগুলোতে নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছেন চসিক কর্মীরা।