'হেয় প্রতিপন্ন' করতেই তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা করেছে দুদক, দাবি ড. ইউনূসের
কোম্পানির ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) থেকে ২৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল দশটা থেকে প্রায় এগারোটা পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ পরিচালক ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি দল।
এ মামলার বিষয়ে তিনি শঙ্কিত কি না এ প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনুস সাংবাদিকদের বলেন, "আমি কোনো অপরাধ করিনি, আমি শঙ্কিত না।"
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে ড. ইউনূসের কাছে সাংবাদিকরা বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাকে ডাকা হয়েছিল, তাই এসেছিলাম। যেহেতু এটা আইনগত বিষয় , তাই বিস্তারিত আমার আইনজীবী বলবেন।"
পরে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিষ্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "এই মামলা অবশ্যই ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি ড. ইউনূসের আইনজীবী হিসেবে ভেতরে (দুদক কার্যালয়ে) গিয়েছিলাম। এবং আমি আইনের সমস্ত ব্যাখ্যা ওইখানে দিয়েছি। তারা (দুদক) বলেছে, ওই সমঝোতা চুক্তিটি জাল। আমি বলেছি, দুই পক্ষের সমঝোতা যখন হয় তখন আর সেটা জাল থাকে না এবং এই চুক্তি হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়া সুতরাং এটা জাল না।"
"ওই চুক্তিতে ছিল, শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে আমরা অ্যাকাউন্ট করেছি। আমরা ৯ তারিখের জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার অনুমতি নিয়েছি। দুদক বলছে, আমরা অনুমতিটা পরে নিয়েছি। আমি বলেছি দেরি হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে এটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে," বলেন তিনি।
ড. ইউনূস মনে করেন, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ দুদক যে মামলাটি করছে, সেটি তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই করা হয়েছে, বলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি আরও বলেন, "দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে ডক্টর ইউনূস বলেছেন, আত্মসাৎ ও পাচারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটির কোন ভিত্তি নেই। কারণ যে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর কথা বলা হচ্ছে, ওই টাকা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকম।"
গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার নামে তলব নোটিশ জারি করার পর, আজ সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূসকে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটের দিকে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ এবং ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে দুদকের প্রাঙ্গণে দেখা যায়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "উনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুদক থেকে নোটিশ পাওয়ার পর জবাব দিতে তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন।"
এর আগে, কোম্পানির ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) থেকে ২৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে তলব করে একটি নোটিশ জারি করে দুদক।
১৩ জনের মধ্যে ড. ইউনূসসহ কয়েকজনকে ৫ অক্টোবর ডাকা হয়। বাকিদের ৪ অক্টোবর ডাকে দুদক।
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন: ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
আজ সকালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসানও দুদকের কার্যালয়ে হাজির হন।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ড. ইউনূসসহ অন্য আসামিদের তলব করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
"ড. ইউনূস আসবেন কি আসবেন না সেটা তার ব্যাপার। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি কমিশনের কাজ নয়," বলেন তিনি।
মামলা করবে কি করবে না সে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকে ডাকবেন।
গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদক জানায়, আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে 'অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা' পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি 'আত্মসাৎ ও অর্থ পাচার' এর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে দুদকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশিরভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক। শুধু তাই নয়, আইএলওতে দেওয়া শ্রমিকদের অর্থপাচারের অভিযোগেরও তদন্ত চায় সংস্থাটি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, পুরো বিষয়টির বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন।
কারণ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শেয়ার দেওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন ড. ইউনূস।