বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাব ভাঙচুর
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/08/img-20250208-wa0000.jpg)
বগুড়া সদর থানা ও সদর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত শহরের সাতমাথার টাউন ক্লাব ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্লাবটি বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত জেলাবাসীর কাছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ক্লাবটি ভাঙার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা 'দিল্লি না ঢাকা; ঢাকা ঢাকা...' সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বগুড়া শহরের এক সময়ের স্বনামধন্য খেলোয়াড় শাহাজানা আলী বাবু বলেন, "ঐতিহাসিক টাউন ক্লাব বগুড়ার মানুষের কাছে অমূল্য সম্পদ। এখানে অনেক খেলোয়াড়ের স্মৃতি রয়েছে। অনেকে দেশের বাহিরে আছেন; তারাও বগুড়ায় এসে একবার টাউন ক্লাব দেখে যান। হঠাৎ বিক্ষুব্ধ জনতা এটা ভেঙে ফেলল।"
"এটা যারা ভেঙেছে তারা এর ইতিহাস এতিহ্য সম্পর্কে কিছু জানেন না। জানলে এমন কাজ করতেন না। বগুড়ার নির্মহ ইহিতাসের স্বাক্ষী টাউন ক্লাব ভাঙা ঠিক হয়নি," যোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে প্রথমে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবেশ করে। তারা ১২ তলা ভবনের নীচতলায় শেখ হাসিনার নামফলক হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে।
রাত ৮টার দিকে স্টেশন রোড, নবাববাড়ি সড়ক দিয়ে দুই শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা 'দিল্লি না ঢাকা... ঢাকা-ঢাকা', 'ভুয়া ভুয়া'- স্লোগান দিয়ে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন টেম্পল রোডে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করে।
এ সময় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়; গুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের অফিস। একইসঙ্গে ভেঙে দেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাব এবং জেলা জাসদের (ইনু) কার্যালয়।
পরে তারা অফিসের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। গভীর রাত পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও জাসদ অফিসের সামনে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল।
এদিকে, ১৮৯৩ সালে বগুড়ায় টাউন ক্লাব প্রতিষ্ঠা পায় বলে জানান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। খেলাধুলা নিয়ে এখনো মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সাবেক এই ক্রীড়াবিদ বলেন, "খেলাধুলা নিয়ে বগুড়ায় প্রথম গড়ে ওঠে টাউন ক্লাব। এই ক্লাব অনেকবার কুচবিহারের মহারাজা টুর্নামেন্টে বিজয়ী হয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। কলকাতার মাঠ কাঁপানো মাহবুবার রহমানের (বড় কালু) খেলার হাতেখড়ি এই ক্লাব থেকে। পরে তিনি কলকাতার ওরিয়ন ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ খেলেন।"
এছাড়াও প্রথম বিভাগ ক্লাব ও জাতীয় টিমের হয়ে এই ক্লাবের অনেক খেলোয়াড় খেলেছেন। ঢাকার মাঠের আফজাল হোসেন, আজগর হোসেন, অমলেষ সেন, সম্রাট, শিমুল এই ক্লাবেরই সদস্য ছিলেন বলে জানান শহিদুল।
বগুড়ার সাবেক একাধিক ক্রীড়া সংগঠক জানান, ক্লাবটি কার্যত অরাজনৈতিক সংগঠন। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নিবন্ধিত এই ক্লাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও কাবাডির আলাদা দল আছে। ঐতিহ্য বহনকারী এই ক্লাব ছিল বগুড়ার তথা দেশের, বিদেশের কাছে একটি পরিচিত নাম। গৌরবগাঁথা ক্লাব কেন ভাঙা হল তা জানা নেই তাদের। ক্লাবটির জায়গা যেন বেহাত না হয় এবং নতুন করে যেন নির্মাণ করা হয়- প্রশাসনের কাছে সে দাবি জানান তারা।