ফজলুর রহমান বাবু: অভিনয়ে ৪২ বছর
১৯৭৮ সালে ফরিদপুরের একটি নাট্যদলে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন ফজলুর রহমান বাবু। এরপর ১৯৮৩ সালে চাকরি সূত্রে ঢাকায় আসেন। যোগ দেন আরণ্যক নাট্যদলে। ১৯৯১ সালে শুরু করেন টেলিভিশন নাটকে অভিনয়।
তার মতে, মঞ্চ ও টেলিভিশন মিলিয়ে অভিনয় জীবনে ৪২ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এরইমধ্যে। অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার।
গত শনিবার যখন তার সঙ্গে কথা হয়, তিনি তখন পুরান ঢাকার নারিন্দায়। 'উড়াল' নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করছিলেন। একটি টিয়া পাখিকে ঘিরে সিনেমাটির গল্প।
শুরুতেই এই সময়ের নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বললেন বাবু। বললেন, 'এখন আমরা শুধু টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন নানা মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। ইউটিউবের জন্য যেমন বানানো হচ্ছে, আবার ওটিটি প্লাটফর্মের জন্যও। নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট চলছে। এই কাজ ভালো যেমন হচ্ছে, আবার দর্শকদের কাছেও সহজে পৌঁছেও যাচ্ছে। এটা মনে এই সময়ের একটা ভালো দিক।'
তাহলে কি টেলিভিশন মাধ্যম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজ্ঞতায় ভরপুর এই অভিনেতা বলেন, 'টেলিভিশনে আমাদের দর্শক এখনো আছে। অনেক মানুষ এখনো বিনোদনের জন্য টেলিভিশনের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমি বলব, এখনো টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চাইলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তারা তাদের কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করে কোয়ালিটি কনটেন্ট দিতে পারেন। তাহলেই টেলিভিশনের দিন ফিরবে।'
ক্যারিয়ারের শুরুতে যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের আর এখনকার পরিচালক সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সিনিয়র ডিরেক্টররা একভাবে ভাবতেন। এখনকার ডিরেক্টররা তাদের মতো করে ভাবেন। ওই সময় সব ডিরেক্টরের মধ্যে সোশ্যাল কমিটমেন্টের জায়গা ছিল। এখনকার ডিরেক্টররা টেকনিক্যালি অনেক সাউন্ড। তাদের গল্প বলার ধরন আলাদা। এছাড়া বিশেষ কোনো পরিবর্তন নেই।'
এই সময়ের অভিনেতাদের নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, 'আমাদের অভিনয় শেখার একটাই জায়গা ছিল, সেটা থিয়েটার। অভিনয়কে ভালোবাসতাম বলে ফরিদপুর ও ঢাকায় দুটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হই। এখন অভিনয় শেখার নানা জায়গা রয়েছে। কিন্তু আমরা যখন থিয়েটার করতাম, তখন শুধু থিয়েটারই করতাম না। তখন অভিনয়ের পাশাপাশি মানুষ হওয়া শিখিয়েছে থিয়েটার। সময়নিষ্ঠতা, পরিপূর্ণতা, নিষ্ঠাবান- এসব থিয়েটার থেকেই শিখেছি আমরা।'
ফজলুর রহমান বাবু এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন ২৫টিরও বেশি চলচ্চিত্রে। টেলিভিশন নাটকও অসংখ্য। যে কোনো চরিত্রেই মিশে যান সহজে। কিছুদিন আগে বিঞ্জ-এ মুক্তি পেয়েছে 'আড়াই মন স্বপ্ন' নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সেখানে ঢাকাফেরত অভাবী মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
আবার, কদিন আগে সাগর জাহানের 'তুমি আমি দ্বিধা' নাটকে অভিনয় করেছেন একজন মানসিক রোগের ডাক্তার হিসেবে। অভিনয় করেছেন 'বিশ্ব সুন্দরী' চলচ্চিত্রেও। দীপ্ত টিভিতে 'মাশরাফি জুনিয়র' নামে সিরিজে পুরোপুরি ভিলেন চরিত্রে দেখা মেলে তার। ভিলেন হিসেবে অবশ্য বেশি সমাদৃত হয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'স্বপ্নজাল' চলচ্চিত্রে। অন্যদিকে, তৌকির আহমেদের 'অজ্ঞাতনামা' চলচ্চিত্রে সন্তানহারা পিতার চরিত্রে অভিনয় করে কাঁদিয়েছেন দর্শকদের।
কীভাবে সব চরিত্রে মিশে যান বাবু?
প্রশ্ন শুনে বলেন, 'এটা আসলে অনেক দিনের অভিজ্ঞতা। আমি চেষ্টা করি চরিত্রটা বুঝে ঠিকঠাক নিজের সেরাটুকু দিতে। তারপর পরিচালকের দিকনির্দেশনা তো থাকেই।'
তার মতো ডেডিকেশন কি এই সময়ের অভিনেতাদের মধ্যে পান? বাবু বলেন, 'আমি সবসময় পজিটিভ চিন্তা করি। এখনো অনেক অভিনেতার মধ্যে কমিটেড অভিনয়শিল্পী রয়েছেন। তারা ভালো কাজও করছেন।'
শুধু অভিনয়েই নয়, গানেও বাজিমাত করেছেন বাবু। গিয়াস উদ্দিনের সেলিমের 'মনপুরা' সিনেমায় সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ২০০৯ সালে প্রকাশ পায় 'ইন্দুবালা' নামে তার একটি গানের অ্যালবামও। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই গাইতে দেখা যায় তাকে।
তবে গান নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা নেই তার। বাবু বলেন, 'এটা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। মানুষ পছন্দ করেন। বিশেষ করে গ্রামের মানুষেরা পছন্দ করেন, এই কারণে গান করা। যতদিন মানুষ পছন্দ করবেন, ততদিন গান গাইব।'
কথায় কথায় জানালেন, তার সব আগ্রহ অভিনয় নিয়ে। এমন চরিত্রে বা গল্পে কাজ করতে চান, যেখানে কাজ করলে সেটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ পছন্দ করবে। হতে পারে সেটা শেক্সপিয়ারের 'ম্যাকবেথ' বা 'ওথেলো' কিংবা রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী'র সেই রাজার মতো কোনো চরিত্রে।