মারা গেলেন ‘নাথিং কমপেয়ার্স টু ইউ’ গান খ্যাত সংগীতশিল্পী সিনিড ও'কনর
৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রখ্যাত আইরিশ সঙ্গীতশিল্পী সিনিড ও'কনর। গতকাল (বুধবার) আইরিশ গণমাধ্যম 'নাথিং কমপেয়ার্স টু ইউ' গান খ্যাত এ গায়িকার পরিবারের বরাত দিয়ে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চারকারী হিসেবে এবং সংগীত জগতে নারীদের আলাদা এক অবস্থান তৈরিতে সিনিডের অবদান অনস্বীকার্য। এখনো পর্যন্ত খ্যাতিমান এ তারকার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আয়ারল্যান্ডের পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার আরটিই গায়কের পরিবারের বরাতে একটি বিবৃতিতে বলে, "খুবই দুঃখের সাথে আমরা আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব সিনিডের মৃত্যুর সংবাদটি জানাচ্ছি। গায়কের পরিবার ও বন্ধুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই কঠিন সময়ে তারা যাতে নিজেদের প্রাইভেসী বজার রাখতে পারে, সেজন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন।"
মূলত ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'নাথিং কমপেয়ার্স টু ইউ' গানের মাধ্যমে সকলের নজরে আসেন সিনিড। গানটি মিউজিক চার্টে ঐ বছর এক নম্বরে পৌঁছেছিল এবং তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছিল।
তবে শুধু সঙ্গীতের মাধ্যমেই নয় বরং ধর্ম, যৌনতা, নারীবাদ ও যুদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্টবাদী মতামতের জন্যও সিনিড বিখ্যাত। এমনকি ক্যাথলিক নানা নিয়মের সমালোচনা করেও নিজের দেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
১৯৯২ সালে টেলিভিশনে 'স্যাটারডে নাইট লাইভ' শো এ সিনিড দ্বিতীয় পোপ জন পলের একটি ছবি ছিঁড়ে ফেলেন। একইসাথে তিনি বলেন, "প্রকৃত শত্রুর সাথে যুদ্ধ করুন।"
সিনিডের মৃত্যুর খবরে আইরিশ ন্যাশনাল রেডিও ব্রডকাস্টারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। চ্যানেলটির গতকালের প্রচারিত নিয়মিত সন্ধ্যায় সংগীত অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মানস্বরূপ এ গায়িকার গানগুলো প্রচার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বর্তমান আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্সও সিনিডের মৃত্যুতে শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, "সিনিড জনসাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বহু বিষয় তুলে ধরেছিলেন। যাদের তাকে জানার সৌভাগ্য হয়েছে, তারা সেই বিষয়গুলোর প্রতি সিনিডের নির্ভীক প্রতিশ্রুতির গভীরতায় প্রভাবিত না হয়ে পারি না। সেই সত্যগুলো এবার যতই কঠিন হোক না কেন।"
প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স আরও বলেন, "খুব তাড়াতাড়িই আয়ারল্যান্ড সাম্প্রতিক দশকের অন্যতম সেরা একজন সঙ্গীতশিল্পী ও পারফর্মারকে হারালো।"
সিনিডের মৃত্যুতে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী টরি এমোস, আইরিশ গায়ক শেন ম্যাকগোয়ান ও রক ব্যান্ড আরইএম এর শিল্পী মাইকেল স্টিপ শোক প্রকাশ করেছেন।
সিনিডের প্রথম অ্যালবাম 'দ্য লায়ন এন্ড দ্য কোবরা' প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। তবে ১৯৯০ সালে প্রকাশিত অ্যালবাম 'আই ডু নট ওয়ান্ট ওয়াট আই হ্যাভেন্ট গট' অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি আলোড়ন তৈরি করেন।
সিনিড তার বিখ্যাত 'নাথিং কমপেয়ার্স টু ইউ' গানের জন্য বেশ কয়েকটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়াও গানটির জন্য তিনি এমটিভির 'ভিডিও অফ দ্য ইয়ার' এবং 'বেস্ট ভিডিও বাই অ্যা ফিমেইল আর্টিস্ট' পুরস্কারে ভূষিত হন।
২০১৪ সালে 'আই অ্যাম নট বসি, আই অ্যাম দ্য বস' নামের মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। মৃত্যুর আগে এটাই ছিল তার প্রকাশিত শেষ অ্যালবাম।
সিনিডের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৮ ডিসেম্বর, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ২০২১ সালে প্রকাশিত স্মৃতিকথায় এ গায়ক জানান, ১৯৮৫ সালে তার মা সড়ক দুর্ঘটনার মারা যায়।
শৈশবে তার মা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। একইসাথে বিভিন্ন সময়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কথাও জানান তিনি।
২০১৭ সালে নিজের ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে সিনিড বলেন, "মানসিক অসুখে ভুগতে থাকা মানুষেরা এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থায় থাকেন। সকলের উচিত আমাদের যত্ন নেওয়া। আমরা অন্য সবার মতো নই।"
সিনিড ১৯৯৯ সালে একটি বিচ্ছিন্ন ক্যাথলিক গোষ্ঠী দ্বারা একজন যাজক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। অথচ ক্যাথলিক চার্চ নারীদের যাজক হওয়া অনুমোদন করে না।
তবে ২০১৮ সালে সিনিড ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন শুহাদা সাদাকাত। যদিও পরবর্তীতে সঙ্গীত অঙ্গনে তিনি ও'কনর নামেই পরিচিত ছিলেন।
চলতি বছরের ১২ জুলাই নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সিনিড পোস্ট করে জানান যে, তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। একইসাথে ভক্তদের জন্যও সুখবর দিয়েছিলেন তিনি।
সিনিড জানান, নতুন অ্যালবামের কাজ শেষ করছেন তিনি। খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে যাচ্ছিল গায়িকার গত এক দশকের মধ্যে মুক্তি পাওয়া প্রথম এই অ্যালবাম। এছাড়াও ২০২৪ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৫ সালের শুরুতে মিউজিক ট্যুরেরও পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
২০২১ সালে 'রিমেম্বারিংস' নামের স্মৃতিকথায় সিনিড বলেন যে, "সকলেই একজন পপস্টারকে দেখতে চায়, তাই না? তবে আমি একজন প্রতিবাদী গায়িকা । আমার বিখ্যাত হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।"