দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারার্স: শিল্পীদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার বিতর্কে ভারতের প্রথম অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারি
চলতি বছরের শুরুতে ভারতে তৈরি প্রথম ডকুমেন্টারি হিসেবে অস্কার জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করে 'দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারার্স'। কিন্তু, প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতারা এর প্রধান শিল্পীদের আর্থিক সহায়তার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে। খবর বিবিসির।
তামিলনাড়ুর আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক দম্পতি– বোম্মান ও বেলি– ছিলেন মূলশিল্পী। রাজ্যের মাদুমালাই টাইগার রিজার্ভে তারা আহত একটি হাতি শাবককে পান। এরপর বাচ্চা হাতিটিকে মমতা দিয়ে পালন করেন তারা। এ নিয়েই এগোয় প্রামাণ্যচিত্রের গল্প।
প্রাণী ও মানুষের প্রেমময় এ সম্পর্ক প্রশংসিত হয় বিশ্বমঞ্চে। জোটে অস্কারের সম্মান। কিন্তু, গত সপ্তাহে বোম্মান ও বেলি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে একটি আইনি নোটিশ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
তাদের অভিযোগ, নির্মাতারা তাদের 'যথাযথ বাসস্থান' ও 'পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার' প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা আর রক্ষা করেননি।
আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি চলতি সপ্তাহের শুরুতে তারা বিবিসিকে নিশ্চিতও করেন।
ডকুমেন্টারি নির্মাতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সময়ে বিবিসি তামিলকে তারা বলেন, কাহিনিটির সকল শিল্পী ও কুশীলবদের প্রতি তাদের 'গভীর শ্রদ্ধা' আছে।
ফিল্মের পরিচালক কার্তিকি গনজালভেস বলেন, 'বোম্মান ও বেলির আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।'
এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর, গত ৭ আগস্ট স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে বোম্মান বলেন, আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি যে আইনজীবী এর সঙ্গে জড়িত তাকেও চেনেন না।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি বিবিসিকে নিশ্চিত করেন তিনি। নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে যে সংবাদ গণমাধ্যমে এরমধ্যে এসেছিল- সেগুলোও সঠিক নয় বলে জানান।
এ দম্পতির আইনজীবী এ এস মোহাম্মদ মঞ্জুর বিবিসিকে বলেন, 'আমরা আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করেছি বলে যেসব দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।'
এলিফেন্ট হুইস্পারার্স নির্মিত হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নীলগীরি পাহাড়শ্রেণির দৃশ্যপটে। অরণ্যে পাওয়া হাতির বাচ্চাটির 'রঘু' নাম দেন বেলি ও বোম্মান। দলছাড়া এই শাবকটির দেখভালের দায়িত্ব তুলে নেন নিজেদের কাঁধে।
বেলি ও বোম্মান তামিলনাড়ুর কুট্টুনায়াকান সম্প্রদায়ের মানুষ, আদিবাসী এই সম্প্রদায় বহু প্রজন্ম ধরে স্থানীয় বনকে রক্ষা করে আসছে।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় এই সম্প্রদায়ের একান্ত চেষ্টা তুলে ধরা হয়েছে ডকুমেন্টারিতে। একইসঙ্গে, প্রাণীদের সঙ্গে তাদের মানব তত্ত্বাবধায়কদের নিবিড় সম্পর্কও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অস্কারের আসরে এই প্রামাণ্যচিত্রের সাফল্যে তারকায় পরিণত হয়েছেন বোম্মান-বেলি দম্পতি। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন তাদের দুজনকে ১ লাখ রুপি করে দিয়েছেন।
গত এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তামিলনাড়ুর এলিফেন্ট ক্যাম্প সফর করেন। এসময় মোদির সাথে দেখা করেন তারা।
খ্যাতি ও সম্মান জুটলেও, তারা যথেষ্ট আর্থিক সম্মানি পাননি বলে অভিযোগ। গত সপ্তাহে তারা একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গনজালভেস এবং বিখ্যাত প্রযোজক গুনিত মোঙ্গার প্রযোজনা সংস্থা শিক্ষা ইন্টারটেইনমেন্টকে আইনি নোটিশ পাঠানোর কথা জানান।
এ দম্পতির অভিযোগ, ছবির শুটিংয়ের সময় নির্মাতারা তাদের বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার কোনোটাই পরে রক্ষা করেননি। এজন্য তাদের ২ কোটি রুপি দিতে বলেছেন আইনজীবীরা। তাদের যুক্তি, এই অর্থ দম্পতির একটি ভালো বাসস্থানের চাহিদা মেটাবে, আর বার্ধক্যের সম্বল হবে।
বিবিসি তামিল সার্ভিসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, গনজালভেস এবং শিক্ষা ইন্টারটেইনমেন্ট বলেছে, প্রাণীদের রক্ষা ও দেখভালের সাথে জড়িত সম্প্রদায়ের বিষয়ে তাদের ডকুমেন্টারি সচেতনতা বাড়িয়েছে। এর সাফল্য 'জাতীয় গৌরব বয়ে আনার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বোম্মান ও বেলির মতো মাহুতদের স্বীকৃতিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।'
খ্যাতি নাহয় হলো, কিন্তু সম্মানি? বোম্মান জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া টাকা ছাড়া তাদের একটি পয়সাও দেননি নির্মাতারা।
আইনি নোটিশে বোম্মান ও বেলি বলেছেন, ফিল্মের খ্যাতির মধ্য দিয়ে বিপুল যে বাণিজ্যিক লাভ নির্মাতারা করেছেন, তার ন্যায্য হিস্যা পাননি তারা।