ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ৩৩ হাজার, ভবন নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে তুরস্ক
তুরস্ক-সিরিয়ার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হাজারে পৌঁছেছে। ১৯৩৯ সালের পর তুরস্কে এটিই এখন সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প।
নজিরবিহীন এ দুর্যোগের সময়েও তুরস্কের বিভিন্ন শহরে লুটপাটের ঘটন ঘটছে। ভূমিকম্পে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরের ব্যবসায়ীরা লুটপাট ঠেকাতে রোববার তাদের দোকানগুলো পুরোপুরি খালি করে ফেলেন। খবর রয়টার্সের।
উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য অন্যান্য শহর থেকে আগত বাসিন্দারাও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমঅবনতির কথা উল্লেখ করেছেন; ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং কম্পনে ধসে পড়া বাড়িঘর থেকে নির্বিবাদে লুট চলছে বলে জানান তারা।
ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সাড়াদান নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সমালোচিত হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকা এরদোয়ান তার ক্ষমতাকালীন দুই দশকের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লুটেরাদের কঠিনভাবে মোকাবিলা করা হবে।
এদিকে ভূমিকম্পের পর একাধিক সেসমিক ফল্ট লাইনে অবস্থিত তুরস্কের ভবনগুলোর নির্মাণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তুর্কি ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশে কয়েক হাজার ভবন ধসের জন্য ১৩১ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিষয়টিকে সূক্ষ্মভাবে অনুসরণ করব, বিশেষ করে যে ভবনগুলো অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং যেখানে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে।"
আগামী জুনে প্রেসিডেন্সিয়াল এবং পার্লামেন্টারি নির্বাচন রয়েছে এরদোয়ানের; এর আগমুহূর্তে দেশটি প্রত্যক্ষ করলো গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্যোগটি। যদিও এ বিপর্যয়ের আগেই ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং তুর্কি মুদ্রার দরপতনের কারণে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।
বিরোধী রাজনীতিকরা ভূমিকম্পে সাড়াপ্রদানে সরকারের বিলম্ব এবং ত্রাণের অপর্যাপ্ততার অভিযোগ এনেছেন। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সেনাবাহিনীকে কেন উদ্ধারের কাজে দ্রুত নামানো হয়নি।
এরদোয়ান স্বীকার করেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াদান সহজ ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
তুরস্কের হাসপাতালগুলোতে এখন চিকিৎসাধীন আছে প্রায় ৮০ হাজার লোক, অস্থায়ী আশ্রয়ে আছে ১০ লাখ।
এদিকে দীর্ঘ ১২ বছরের গৃহযুদ্ধে আগে থেকেই সিরিয়ার অবকাঠামোগত অবস্থা ভগ্নপ্রায়, বাস্তুচ্যুত দেশটির বহু মানুষ। ভূমিকম্পে সিরিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এখন ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ সহায়তাও।
এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। জাতিসংঘের একজন মুখপাত্রের ভাষ্যে, তাদের অনুমোদনের অভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে কট্টরপন্থী এ বিরোধী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের কাজ ঝুলে আছে।