অনলাইন লুডু থেকে প্রেম, বিয়ে- পাকিস্তানি তরুণী ভারতে এসে শেষে পুলিশের জালে!
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক পাকিস্তানি নারীকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করানো এবং তাকে জাল আইডি কার্ড পেতে সহায়তা করায় এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। যে নারীকে তিনি সাহায্য করেছেন, তিনি সম্পর্কে তার স্ত্রী।
বছর তিনেক আগে অনলাইনে লুডু খেলতে গিয়ে ২১ বছর বয়সী মুলায়াম সিং যাদবের সঙ্গে পরিচয় হয় পাকিস্তানি তরুণী ইকরা জিওয়ানির (১৯)। সেখান থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুজনে। যদিও তারা জানতেন, তাদের একসঙ্গে থাকা বেশ কঠিন হবে। এর মূল কারণ হিসেবে রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ভঙ্গুর সম্পর্ক।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তা ইতোমধ্যে সবারই জানা। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্ত এই প্রতিবেশী দেশ দুটি ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আর এসব কারণেই ভারত ও পাকিস্তানে ভ্রমণ করতে গেলে দুই দেশের মানুষের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
২০২০ সালে কোভিড লকডাউনের সময় জিওয়ানি ও যাদবের প্রেম শুরু হয়। যাদব বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করতেন এবং জিওয়ানি পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহরে পড়াশোনা করতেন।
অনলাইনে পরিচয়ের পর দুই দেশের প্রতিবন্ধকতা জানা সত্ত্বেও তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ইকরা জিওয়ানিকে তার পরিবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি যাদবের পরামর্শে পাকিস্তান ছেড়ে আসেন। যাদবের সাথে দেখা করতে তিনি দুবাই হয়ে নেপালে যান। পুলিশ বলছে, সেখানকার একটি মন্দিরে হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন তারা এবং ভারতে ফিরে আসেন।
পুলিশ জানায়, জিওয়ানির কাছে ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় যাদব তার জন্য একটি জাল আধার কার্ডের (ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র) ব্যবস্থা করেন।
পুলিশের ভাষ্যে, যাদব প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতেন এবং জিওয়ানি বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই পাকিস্তানে নিজের মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন, যার ফলে পুলিশ তাদের সন্ধান পেয়ে যায়।
বেঙ্গালুরুর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা গত মাসে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন কারণ ফেব্রুয়ারিতে শহরে দুটি বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর একটি হলো অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো এবং অন্যটি জি-টুয়েন্টি অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক।
আরও তদন্তের পর ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং ২০ জানুয়ারি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে হস্তান্তর করা হয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এস গিরিশ বিবিসিকে বলেন, "এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে শুধু অবৈধভাবে দেশে আসা ছাড়া আর কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। তবে তদন্ত চলছে।"
এ বিষয়ে জানতে বিবিসি ইকরা জিওয়ানি বা পাকিস্তানে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এ সপ্তাহের শুরুতে পিটিআই নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, জিওয়ানির বাবা নিশ্চিত করেছেন যে তার মেয়ে বাড়িতে পৌঁছেছেন এবং তারা 'এই বিষয়ে কথা বলতে' চান না।
যাদবের মা শান্তি দেবী বলেন, দুই দেশের সরকার জিওয়ানি ও যাদবকে পুনরায় মিলিত হতে সাহায্য করবে বলে তার প্রত্যাশা।
"সে মুসলিম না পাকিস্তানি তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। সে আমাদের পুত্রবধূ, আমরা তার যত্ন নেব", বলেন শান্তি দেবী।