কৃষকদের চাল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করছে থাইল্যান্ড, বাজারে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা
পানির ব্যবহার কমাতে কৃষকদের চালের উৎপাদন কমিয়ে আনার জন্য উৎসাহিত করছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করার পর থাইল্যান্ডের এমন পদক্ষেপের ফলে চালের বাজারে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডে এবছর স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই পানির ব্যবহার সীমিত করতে অফিস অব দ্য ন্যাশনাল ওয়াটার রিসোর্সেস (ওএনডব্লিউআর) দেশের কৃষকদের 'এমন সব ফসল উৎপাদন করতে বলেছে যেগুলো উৎপাদনে কম পানি ব্যবহৃত হয় এবং কম সময়ের মধ্যে ফসল তোলা যায়।'
থাইল্যান্ডের জাতীয় পানি প্রশাসনের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওএনডব্লিউআর-এর সেক্রেটারি জেনারেল সুরাসি কিরতিমনতন বলেন, "এবার কিউমুলেটিভ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম, যার ফলে পানির ঘাটতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।"
কিরতিমনতন বলেন, থাইল্যান্ডের পানি ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের এখন 'পানি ব্যবহারের পরিমাণের' দিকে নজর দিতে হবে, সেইসঙ্গে বহুবর্ষজীবী বা বারোমেসে ফসলের জন্য পানি ব্যবহার' করা শ্রেয় হবে।
বারোমেসে ফসল হলো যেগুলো ফসল তোলার পরপরই আবার বড় হয়, ফুল-ফল ধরতে শুরু করে এবং প্রতি বছর নতুন করে গাছ রোপণের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ধান সেই ধরনের কোনো ফসল নয়, এটি একটি বার্ষিক ফসল হিসেবে বিবেচিত।
চালের আকাশছোঁয়া মূল্য
প্রতি কিলোগ্রাম চাল উৎপাদনের জন্য গড়ে প্রায় ২৫০০ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। সেই তুলনায়, বিকল্প শস্য, যেমন- জোয়ার,ভুট্টা ইত্যাদি একই পরিমাণে জন্মাতে লাগে ৬৫০ থেকে ১২০০ লিটার পানি।
গত মাসে ভারত নন-বাসমতি সাদা চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিজেদের দেশীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে বলে জানায় ভারত সরকার।
ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ এবং বিশ্বের মোট চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। ফলে দেশটির এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে লাখ লাখ মানুষের উপর।
রাবোব্যাংক-এর সিনিয়র বিশ্লেষক অস্কার জাকরা সিএনবিসিকে বলেন, "থাইল্যান্ডে যদি চাল উৎপাদন কমে যায় তাহলে বিশ্ববাজারে চালের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।"
তবে থাই কৃষকেরা এই আহ্বানে সাড়া দেবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়, বলে জাকরা। "বর্তমানে চালের রপ্তানি মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে কৃষকেরা হয়তো চালই উৎপাদনেই বেশি আগ্রহী হবেন ।"
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর প্রধান শস্যগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ার পর ভোক্তারা চালের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে বিকল্প শস্য হিসেবে চালের দাম বেড়েই চলেছে।