'কৌতূহল থেকে' আগন্তুককে খুন করলেন কোরিয়ান ক্রাইম শো'র ভক্ত
ক্রাইম শো ও উপন্যাসে আছন্ন এক দক্ষিণ কোরিয়ান ভক্ত 'কৌতূহল থেকে' এক আগন্তুককে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে সেটি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত জাং ইয়ো-জাংকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। খবর বিবিসির।
পুলিশ জানায়, ২৩ বছর বয়সী জাং সাইকোপাথ টেস্টে বেশ উচ্চ লেভেলের স্কোর করেছেন। গত মে মাসে 'হত্যার' উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি একটি অ্যাপের মাধ্যমে এক ইংরেজি শিক্ষকের সাথে পরিচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ঐ শিক্ষকের বাড়িতে যেয়ে ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করেন।
হত্যাকাণ্ডটি দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অপরাধের ধরণ বিবেচনায় মামলার প্রসিকিউটররা আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলেন। এই ধরণের অনুরোধ দেশটিতে সাধারণত বহু গুরুতর অপরাধের জন্য করা হয়।
প্রসিকিউটরেরা আদালতকে জানায়, বেকার ও নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা জাং নিজের দাদার সাথে থাকতেন। তিনি একটি অনলাইন টিউশন অ্যাপে ভুক্তভোগীকে মাসের পর মাস টার্গেট করেছিলেন।
জাং হত্যার জন্য ৫০ জন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং পরিশেষে ঐ নারীকে নিজের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব শহর বুসানে ভুক্তভোগীর বাড়িতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীর সম্পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে।
জাং মূলত অনলাইন থেকে হাই-স্কুলের ইউনিফর্ম কিনে সেটি পরে টিউটরের বাড়িতে উপস্থিত হন। সেখানে ঐ নারী শিক্ষককে প্রায় ১০০ বারেরও বেশি ছুরিকাঘাত করা হয়। এমনকি মারা যাওয়ার পরেও একইভাবে আক্রমণ করতে থাকা হয়।
তারপর জাং নারীর মরদেহটি টুকরো টুকরো করেন এবং বুসানের উত্তরে একটি নদীর কাছে প্রত্যন্ত পার্কল্যান্ডে ভাড়া ট্যাক্সিতে যেয়ে ফেলে দেন।
এক্ষেত্রে ট্যাক্সি ড্রাইভার লক্ষ্য করেন যে, তার যাত্রী একটি রক্তমাখা স্যুটকেস বনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ যাত্রী সম্পর্কে তিনি পুলিশকে জানান এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জাংয়ের অনলাইন ব্রাউজিং হিস্টোরি থেকে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডটি করার জন্য তিনি মাসের পর মাস ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। কীভাবে টার্গেটকে মারা যায় কিংবা মরদেহকে লুকিয়ে ফেলা যায় ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি খুব বিশদভাবে শেখার চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপরাধী বেশ বেখায়ালি ছিলেন। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। ফলে ক্লিপগুলোতে তাকে টিউটরের বাসায় আসতে-যেতে দেখা যায়।
গত শুক্রবার মামলাটির রায় প্রদানের সময় বুসান ডিসট্রিক্ট কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডটি সমাজে এমন একটা ভয় ছড়িয়ে দিয়েছে, কেউ বিনা কারণেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। একইসাথে অপরাধটি সমাজে 'সাধারণভাবে অবিশ্বাসকে' উস্কে দিয়েছে।
গত জুন মাসেই জাং নিজের অপরাধ আদালতের কাছে স্বীকার করে নেন। আরও লঘু সাজার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, অপরাধটি করার সময় হ্যালুসিনেশন এবং অন্যান্য মানসিক ব্যাধিতে তিনি ভুগছিলেন।
তবে আদালতের পক্ষ থেকে এমন যুক্তি আমলে নেওয়া হয়নি। কেননা অপরাধটি খুবই সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে মানসিক কিংবা শারীরিক ব্যাধির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
প্রসিকিউটরেরা জানান, অভিযুক্তকারী বারবার নিজের বয়ান পরিবর্তন করেছে। প্রাথমিকভাবে জাং বলেছিলেন, অন্য কেউ নারীকে হত্যা করার পরে তিনি কেবল লাশটি সরিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু আবার পরে দাবি করেন যে, তর্কের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে।
শেষে জাং স্বীকার করে নেন যে, ক্রাইম শো এবং টিভি প্রোগ্রাম দেখে তার খুন করার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যদিও ১৯৯৭ সালের পর সেটি আর কার্যকর করা হয়নি।